মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : যৌতুকের কারণে মাগুরায় রিমা আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। সে মাগুরার শহরতলি সাতদোয়া পাড়ার মৃত দুলাল মোল্লার কন্যা।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রিমার মা রিনা খাতুন জানান, বাপ মরা মেয়েটি কে অনেক কষ্টে মানুষ করার পর একটি সুখের সংসারের আশায় ৭ বছর আগে গোপালপুর কালার বাজার এলাকার মান্নাফ মিয়ার ছেলে মাসুদের সাথে বিয়ে দেন। তাদের পরিবারে ১৫ মাস বয়সের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবীতে মেয়ে রিমার উপর নানা অযুহাতে অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে আসছে জামাই। মেয়ের সুখের জন্য ধার দেনা করে কয়েকদিন আগেও প্রায় এক লক্ষ টাকা দেয়া হয়েছে। তার চাহিদা পুরণ করতে গিয়ে একটি সমিতি থেকে কিস্তিতে দশ হাজার টাকা লোন তুলতে হয়েছে। অথচ এতকিছুর পরও কিছুদিন পরপরই মাসুদ মেয়ের উপর নির্যাতন চালায়।
তিনি বলেন, গত ৭ বছরে একাধিকবার এ নিয়ে পারিবারসহ স্থানিয় চেয়ারম্যান, মেম্বারদের নিয়ে সালিশ দরবার করা হয়েছে। সবশেষে মাত্র ১০ দিন আগেও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ স্থানিয়দের সমঝোতার মাধম্যে নির্যাতন না করার অঙ্গীকার করে মেয়েকে তারা স্বামীর বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু গত শনিবার সামান্য অযুহাতে পুনরায় দুই দফা প্রচন্ড মারধর করে অচেতন অবস্থায় ঘরে ফেলে রাখে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচন্ড আঘাতে থেতলে দেয়া হয়। স্থানীয় মেম্বার জহিরের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে গেলে তাদের উপরও চড়াও হয় মাসুদ ও তার পরিবারের লোকেরা। চিকিৎসার জন্য মেয়েকে নিয়ে আসতে বা দেখতে যেতেও দেয়না। পরে কৌশলে মুমুর্ষ অবস্থায় মেয়েকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা জজ আদালতে বুধবার যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানান রিনা আক্তার।
নিয়মিত স্বামীর বাড়ির লোকদের হাতে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ রিমা বলেন, কত রকম ভাবে নির্যাতন করা যায় তার সবই আমার উপর করা হয়। কিন্তু কী করবো? ছোট্ট মেয়েটিকে নিয়ে কোথায় যাবো, কার কাছে এর প্রতিকার পাবো জানিনা।
স্থানীয় মেম্বার জহিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে বলেন, মাসুদ ও তার পরিবার মেয়েটির উপর প্রায়ই নির্যাতন করে থাকে। এ নিয়ে কয়েকদফা সালিশ করা হয়েছে। মাসুদ মুচলেকা দিলেও সে বা তার পরিবারের লোকেরা নিজেদের শুধরে নেইনি।
মাগুরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার বিকাশ চন্দ্র জানান, মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। সে শারীরিক ভাবে ভীষণ দূর্বল । তবে যথাযথ চিকিৎসায় সে ভাল হয়ে উঠতে পারে।