মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরায় শিক্ষায় সংকট ও প্রতিকার বিষয়ে শুক্রবার মতবিনিময় সভা করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট মাগুরা জেলা শাখা। জেলার শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নানা অসংগতি, ক্রমহ্রাসমান শিক্ষার মান এবং সমস্যা থেকে উত্তরণে করণিয় বিষয় ছিল এ মতবিনিময় সভার উপজীব্য।
সংগঠনের জেলা শাখার আহ্বায়ক ভবতোষ বিশ্বাস জয়ের সভাপতিত্বে সৈয়দ আতর আলি গণগ্রন্থাগার মিলনায়তনে আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক অধ্যক্ষ কাজী ফিরোজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর কেন্দ্রীয় পাঠচক্র ফোরামের সদস্য প্রকৌশলী শম্পা বসু , সিপিবি সদর উপজেলা কমিটির সভাপতি আনিসুর রহমান, সদস্য সামছুন নাহার জোছনা, রেডিয়েন্ট স্কুলের পরিচালক শরীফ তেহরান টুটুল, সাংবাদিক রূপক আইচ, জগদীশ সম্মেলনী কলেজের শিক্ষক আব্দুল আজিজ, অভিভাবক করিমন বেগম, ছাত্র ফ্রন্ট সংগঠক কেয়া বিশ্বাস ও ঐশী বিশ্বাস|
মতবিনিময় সভায় বক্তারা বলেন, এই করোনা পরিস্থিতিতে গত বছরের মার্চ মাস থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে যেতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে। দেশের যে সাতটি জেলার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে মাগুরা জেলা তার মধ্যে অন্যতম । এই জেলায় শিক্ষার্থীদের অনেকে ইতিমধ্যেই শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ঝরে পড়েছে, আরও অনেকের ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে । করোনার সময়ে অনেক অভিভাবক কাজ হারিয়েছেন, অনেকের বেতন কমে গেছে, রাষ্ট্রয়ত্ব পাটকল-চিনিকল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী করোনাকালে শিশু শ্রমিকে পরিনত হতে বাধ্য হয়েছে; অনেক কন্যা শিশুর বাল্য বিবাহ হয়েছে । সরকার মনোযোগী হলে এটোটা খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। করোনার শুরু থেকেই শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের চরম উদাসীনতা ও অবহেলা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। অনলাইন ক্লাসের ঘোষণা দিয়েই শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকার তার দায়িত্ব শেষ করেছে।
দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর-ই যে অনলাইন ক্লাস করার সামর্থ্য নেই–এ কথা সরকার কানেই তুলে নি। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। ‘টাকা থাকলে শিক্ষা আছে, টাকা না থাকলে শিক্ষা নেই’–এই বাস্তবতায় শিক্ষা যে একটি অন্যতম মৌলিক অধিকার এ যেন আমরা ভুলতে বসেছি। অথচ অনেক দাবি করার পরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন-ফি মওকুফ করা হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষার্থী নতুন বছরে স্কুলে ভর্তি হতে পারেনি। অথচ সামান্য কিছু টাকা শিক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ করলে শিক্ষার্থীদের এই বেতন-ফি মওকুফ করা যেত।
বক্তাগণ আরও বলেন, করোনা পরিস্থিতি ছাড়াও মাগুরা জেলায় শিক্ষার মানের বেহাল দশা দেখতে পাওয়া যায়। দীর্ঘদিন ধরে যশোর বোর্ডের মধ্যে সর্বনিম্ন পাশের হার ছিল মাগুরায়। শিক্ষার মান সেখান থেকে খুব বেশি উন্নত করা যায়নি । এই জেলায় কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই। স্কুল-কলেজের শিক্ষার মানও ভালো না, নিয়মিত ক্লাস হয় না। পড়াশোনা হয়ে গেছে সম্পূর্ণ প্রাইভেট নির্ভর ।
মতবিনিময় সভা থেকে বক্তাগণ শিক্ষাক্ষেত্রে এ সকল সংকট দূর করতে ঐক্যবন্ধ হওয়ার আহ্বান জানান ।