আজ, মঙ্গলবার | ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১২:১৮


মাগুরায় সর্বদলীয় সভায় জেলার পরিচয়বাহি নতুন স্মৃতিস্তম্ভের নকশা অনুমোদন

মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : অবশেষে শহরের ভায়নার মোড়ে মাগুরার জেলার পরিচয়বাহি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। সোমবার স্থানীয় সাংবাদিক এবং সুধি সমাজের উপস্থিতিতে জেলার সর্বদলীয় সভায় প্রাথমিকভাবে নতুন নকশা চুড়ান্ত করা হয়েছে।

একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধে মাগুরামুক্ত দিবস ৭ ডিসেম্বর এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের ৭ বীরশ্রেষ্ঠ’র সাধারণ সংখ্যা ‘সাত’কে নতুন নকশায় প্রাধান্য দিয়ে ৭টি স্তম্ভ রাখা হয়েছে।

নতুন নকশা চুড়ান্তকরণে সোমবার মাগুরা জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করা হয়। মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের আহ্বানে এবং জেলা আওয়ামীলীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আফম আবদুল ফাত্তাহ’র সভাপতিত্বে সর্বদলীয় এ সভায় জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।

বিকাল ৪টায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের স্বাগত বক্তব্যের পর দেশের খ্যাতনামা ডিজাইনারদের অঙ্কিত ৪টি নকশা উপস্থাপন করেন জেলা আওয়ামী যুবলীগ আহ্বায়ক ফজলুর রহমান।

পরে উপস্থাপিত ৪টি নকশার উপর মতামত দিয়ে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবু নাসির বাবলু, জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু, সাংগঠনিক সম্পাদক পৌর মেয়র খুরশিদ হায়দার টুটুল, জেলা বিএনপি আহ্বায়ক আলি আহমেদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর, জেলা জাতীয় পার্টি’র এডভোকেট রতন মিত্র জীবন, জাতীয় পার্টি (মনজু) সভাপতি ফতেহ আলি, জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক সমীর চক্রবর্তি, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক কামরুজ্জামান চাঁদ, মাগুরা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক শামিম খান, সাংবাদিক আবু বাসার আখন্দ, এডভোকেট মকলেছুর রহমান, অলোক বোস, বিশ্বজিত বিশ্বাস সহ আরো অনেকে।

বক্তাদের অধিকাংশই ৭টি স্তম্ভ সম্বলিত উপস্থাপিত ১নং নকশাটির পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ে ১৯৯৭ সনের দিকে প্রথম ভাস্কর্য স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তত্কালিন জেলা প্রশাসক নুরুজ্জামান খানের ঐকান্তিক ইচ্ছাতে সে সময় রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থি ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক সাদাত মোহাম্মদ সোহেলের তৈরিকৃত ৬টি ফিগারের স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিচয়বাহি একটি ভাস্কর্য ৮ লক্ষ টাকায় নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ২০০১ সনে সরকারের পালাবদলে বিএনপি ক্ষমতাসীন হলে নির্বাচিত ভাস্কর্যটি বাতিল করা হয়।

সূত্র মতে, মাগুরা জেলা বিএনপি’র তত্কালিন সভাপতি ইকোনো গ্রুপের মালিক মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামালের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে সেখানে প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা ব্যায়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয় বর্তমান স্তম্ভটি।

৩ বছরের মাথায় ২০০৪ সনে মাগুরা পৌর পার্কের গেটে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নামের এই স্তম্ভটির উদ্বোধন করা হলেও সেটি আদৌ স্বাধীনতার স্মৃতি বহনকারী কোনো স্তম্ভ ছিল না বলে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন।

মুক্তিযোদ্ধারা জানান, সে সময় মাগুরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার ছিলেন বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম ইকু মীর। অথচ ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ নামের ওই ভাস্কর্য উদ্বোধনকালে স্থানীয় কোনো মুক্তিযোদ্ধা এমনকি তত্কালিন কমাণ্ডার সৈয়দ ইকু মীরকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ না জানানোয় তিনি সেদিন স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শুধু তাই নয়, তথাকথিত ওই স্তম্ভটিতে জেলার বিভিন্ন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের মধ্যে ২ জন চিহ্নিত রাজাকারের নামও সংযুক্ত করে বিতর্কিত করে তোলা হয়। যে ঘটনায় ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধারা উদ্বোধনের পর থেকেই বিতর্কিত এই স্তম্ভটি ভেঙ্গে ফেলার দাবি জানিয়ে আসলেও সেটি বরাবরই উপেক্ষিত ছিল। যার প্রেক্ষিতে বাধ্য হয়ে তারা ওই স্তম্ভের বেদিতে সন্নিবেশিত ২ দুই রাজাকারের নাম কালো রঙে ঢেকে দিলেও সেটি স্পষ্ট ছিল বলে তারা জানান।

এ অবস্থায় দুই রাজাকারের নাম সংবলিত তথাকথিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ভেঙ্গে মাগুরা জেলার পরিচয়বাহি নতুন নকশায় স্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সর্বদলীয় সভায় উপস্থিত সুধিজন ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা।

মাগুরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্তম্ভ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী শহরের ভায়নার মোড়ে মাগুরা জেলার পরিচয়বাহি এই স্মারক স্তম্ভটি নির্মাণের জন্যে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology