নিজস্ব প্রতিবেদক : একাত্তরে মাগুরায় সংঘটিত বিভিন্ন যুদ্ধ ও অপারেশনে সরাসরি অংশগ্রহণ করলেও এখনও গেজেটেড হতে পারেননি জার্মান প্রবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বাবু। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার সারঙ্গদিয়াতে। তাঁর সতীর্থ মুক্তিযোদ্ধারা সবাইই গেজেটেড হয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। ৬৯ এর গণআন্দোলনেও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ৬ দফা ও ১১ দফার দাবিতে ছাত্রবস্থায় জীবনপণ করে আন্দোলনের মাঠে থাকেন। ৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠনে সমস্ত ধরনের প্রচার-প্রচারণায় সামনের কাতারে থাকেন। সেসময় তিনি লেখাপড়া করতেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে।
যুদ্ধ শুরু হলে তিনি রংপুর ছেড়ে নিজ বাড়ি তৎকালীন মাগুরা মহকুমার শ্রীপুরের সারঙ্গদিয়া চলে আসেন এবং মোল্লা নবূয়ত আলীর সাথে দেখা করে সরাসরি যোগ দেন-আকবরবাহিনী তথা শ্রীপুর বাহিনীতে। একসময় প্রশিক্ষণ এবং অতিরিক্ত অস্ত্র সংগ্রহের জন্য হরেন বাবুর ছেলে বন্ধু কানাই (সারঙ্গদিয়া) সহ করিমপুর বর্ডার দিয়ে চলে যান ভারতে। ভারতের কল্যাণীতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর মোল্লা নবুয়াত আলীসহ অন্যানদের সাথে শ্রীপুরে ফিরে আসেন। শ্রীপুরে এসে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় তৎপর থাকেন।
একাত্তরের ১৯ জুলাই অল্পের জন্য তিনি কুখ্যাত রিজু-কবীর বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পান। ঐদিন পারনান্দুয়ালী থেকে ভোরে কুখ্যাত রিজু-কবীর বাহিনী ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা লুুতুকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। লুতু এবং মাহবুবুর রহমান বাবু একই ঘরে একই বিছানায় শুয়ে থাকলেও চিনতে না পারার কারণে মাহবুবুর রহমান বাবু বেঁচে যান।
মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটেড হওয়ার জন্য গত বছর মাহবুবুর রহমান বাবু জার্মানস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত করেন। গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানস্থ দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি মো. শফিউল আজম মাহবুবুর রহমান বাবুর দরখাস্ত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি (প্রশাসন) বরাবর প্রেরণ করেন। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় দরখাস্তটি হাতে পেলেও এখন পর্যন্ত মাঠ তদন্তের জন্য কোনো উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানা যায়নি।
মাহবুবুর রহমান বাবু বলেছেন, তিনি কখনই কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা নেওয়ার জন্য যুদ্ধ করেননি। এটি তিনি বিশ্বাসও করেন না। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভবিষ্যত বিবেচনায় একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার গেজেটেড হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণেই তিনি গেজেটেড হওয়াটা উপলব্ধিতে নিয়ে এসেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদফা তালিকা করা হলো, কিন্তু আমার মতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম নেই এটি খুবই দুঃখজনক। অথচ অনেক অমুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে। কিন্তু পাহাড় সমান দেশপ্রেম আর কমিটমেন্ট নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু যে অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা দেখেছিলেন, আমরা সেই দেখা থেকে একবিন্দু বাইরে ছিলাম না। আমাদের দেশপ্রেম ও ভালবাসার অবশ্যই মূল্যায়ন হওয়া দরকার। মাহবুবুর রহমান বাবু প্রায় তিন যুগ হলো জার্মানের অসবুর্গে বসবাস করছেন।