মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে মাগুরার সিলপ্যাড সর্বস্ব কথিত এনজিও’র নামে বরাদ্দকৃত সরকারের ৩০ লক্ষ টাকা শেষ পর্যন্ত মাগুরা সিভিল সার্জনের দৃঢ়তায় রক্ষা পেলো।
স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা খাতে কার্যক্রম না থাকলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সিন্ডিকেটের তদ্বিরের জোরে মাগুরার তথাকথিত এনজিও’র নামে এসব বরাদ্দ দেয়া হয় বলে জানা গেছে।
সূত্রমতে, ২০২১ সনের ১৭ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের দায়িত্বরত উপ সচিব উম্মে হাবিবা স্বাক্ষরিত বরাদ্দপত্রে দেশের বিভিন্ন জেলার ১ হাজার ৪৪টি বেসরকারি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ৬ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে মাগুরার সদর, শ্রীপুর, শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলার ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ১ লক্ষ, ৭৫ হাজার ও ৫০ হাজার টাকা হারে মোট ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে একই মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সচিব মো. শহীদুজ্জামান চলতি বছরের ৭ এপ্রিল সারাদেশের ৭৮১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যার মধ্যে মাগুরার ১৩টি প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এদের মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম উভয় বরাদ্দ তালিকাতে রয়েছে।
মাগুরা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এই ১৩টি এনজি’ওর মধ্যে ১০টির অর্থ ছাড় করে দিলেও বাঁধ সেধেছেন মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে ৫৯টি স্থানীয় এনজিও’র নামে ৩১ লক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও মাগুরা সিভিল সার্জন মাত্র ২ টি বাদে বাকি ৫৭টির অনুকুলে বরাদ্দকৃত ৩০ লক্ষ টাকা আটকে দিয়েছেন।
মাগুরা জেলায় ওই ৫৭টি এনজিও’র সংশ্লিষ্ট খাতে কোনো কার্যক্রম নেই। এমনকি অনেকের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা পর্যন্ত নেই। অথচ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সহায়তায় তথাকথিত এনজিওগুলো দীর্ঘদিন ধরে হাতে বানানো বিল ভাউচার উপস্থাপনের মাধ্যমে সরকারের কোটি কোটি টাকা তসরুপ করে আসছে বলে বিভিন্ন সূত্র দাবি করেছে।
সরজমিনে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মাগুরা জেলার ভলেন্টারি অরগাইনজেশন ফর সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট-ভোস্ড নামে একটি এনজিও’র নামে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা উভয় বিভাগ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মাগুরা শহরের কলেজপাড়া তাদের প্রধান কার্যালয় হিসেবে উল্লেখ করা হলেও সেখানে কিংবা জেলার অন্য কোথায়ও তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি।
৭ সদস্য বিশিষ্ট এই এনজিওটির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানের ঠিকানা মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট উল্লেখ করা হলেও সাধারণ সম্পাদক সহ বাকি ৬ জনের ঠিকানা ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায়। যাদের অনেককেই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে আশ্রয় পল্লী উন্নয়ন সংস্থার ঠিকানা মাগুরা শহরের কলেজপাড়া। সারা মাগুরার কোথায়ও তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটিও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উভয় শাখা থেকে বরাদ্দ পেয়েছে। হাতে বানানো বিল ভাউচারের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্য শিক্ষা খাতের বরাদ্দকৃত চেকের অর্থ উত্তোলন করতে সক্ষম হলেও মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ানের দৃঢ়তার কারণে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের চেক নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
অনুদান প্রাপ্ত বাকি এনজিও গুলোর অবস্থাও প্রায়ই একই রকম।
মাগুরা জেলা প্রশাসনের একটি শাখার তদন্ত প্রতিবেদনে অধিকাংশ এনজিও’র অস্তিত্ব নেই, কার্যক্রম দেখা যায় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ওইসব এনজিওর অনুকুলে প্রায় প্রতি বছরই কোটি কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। যদিও জেলা প্রশাসনের প্রতিবেদন সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন মাগুরা শহরের ইসাডো এবং আবুল কাশেম শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামে দুটি এনজিও।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা এনজিও কমিটির সদস্য মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান ঘটনার সত্যতা স্বীকার বলেন, জেলার ৬৫টি এনজি’ওর উপর জরিপ করে মাত্র দুটি’র কার্যক্রম পাওয়া গেলেও অবশিষ্ট এনজিওগুলোর কোনো খবর নেই। তারপরও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রতিবেদন আকারো জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।