আজ, শনিবার | ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | বিকাল ৫:০১

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরার হাজীপুর সম্মিলনী ডিগ্রি কলেজের রজতজয়ন্তী উদযাপন ক্রীড়ালেখক হিসেবে সম্মাননা পেলেন মাগুরার জাহিদ রহমান মাগুরা জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে ছাত্রদলের অভিনন্দন মাগুরা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা মাগুরার রওশন ট্রাস্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিচ্ছে মাগুরায় বিএনপি সহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে মুক্ত দিবস পালন মাগুরার দারিয়াপুর কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে বিএনপির দু’ গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের অব্যাহতিতে মহম্মদপুরে আনন্দ মিছিল মাগুরার আঠারোখাদা গ্রামে ছেলের ছুরির আঘাতে বৃদ্ধ বাবা খুন মাগুরায় বাংলাদেশের আলো পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী উদযাপন

মিষ্টি, মাগুরার ঐতিহ্য-অনন্যা হক

অনন্যা হক : এটা একটা নিত্য দিনের ব্যাপার ছিল, আমরা দু ভাই, বোন, আমি আর ভাইয়া প্রতি ভোরে নিরিবিলি রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে নদীর পাড়ের দোকানটাতে যেতাম। হাতে একটা ঘটি থাকতো, ওটাতে করে ঘোল আনার জন্য। এরপরে বৈশাখী মিষ্টির দোকান থেকে সন্দেশ নিতাম, তখন দিত পদ্মপাতায় করে। এই ঘোল আর সন্দেশ নিয়ে বাড়ি ফিরতাম। পদ্মপাতার যে সন্দেশ খেয়ে ছোট বেলাটা কেটেছে, সে যেন এক অমৃতের স্বাদ। এখনও মুখে লেগে আছে।

মাগুরার সন্দেশ আর প্যাড়া সন্দেশ অনেক জায়গা থেকেই একটু ভিন্ন স্বাদের। প্যাড়াটা আগের দিনে শীতের গুড় উঠলে বেশী চলতো। এখন যেহেতু সব কিছু সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে,তাই সারা বছরই পাওয়া যায়।

মাগুরার মিষ্টি আগাগোড়াই খেতে সুস্বাদু। এসব মিষ্টির ভেতরে যত রকম মিষ্টি থাক না কেন, চমচম আর কালোজামের একটা আলাদা কদর রয়েই গিয়েছে। গ্রাহকদের আকর্ষণ একইরকম ভাবে ধরে রেখেছে। বাড়ি থেকে যতবার আসি,কালোজাম আর চমচম তালিকার প্রথমে রেখে এরপর অন্য মিষ্টি যোগ করি। এক সময় স্কুলের টিফিনে হয় চমচম না হলে কালোজাম থাকতো। যার আকর্ষণে আমরা উন্মুখ হয়ে থাকতাম। এখন সেসব স্মৃতির পাতায় যোগ হয়ে আছে।

মাগুরার দই এর স্বাদও অতুলনীয়। বিশেষ করে খামার পাড়ার দই। খামারপাড়ার দই মাগুরাসহ আশেপাশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দীর্ঘদিন দিন ধরে নিজস্ব ঐতিহ্য বহন করে যাচ্ছে। কেবলমাত্র ও সব এলাকাই নয়, রাজধানী ঢাকা সহ সারা দেশেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিয়েসহ অন্যান্য যে কোন অনুষ্ঠানে এই দই এক অনন্য তালিকায় স্থান পায়। শুনেছি রাধানগর আর বিনোদপুরের মিষ্টিও ভালো।

মাগুরার জনপ্রিয় মিষ্টির তালিকাতে আরো আছে, বিখ্যাত ক্ষীরের সন্দেশ, লাল মোহন,পানতোয়া, রসগোল্লা, রস মালাই,ছানার জিলাপি- এমন আরো কিছু। এর ভেতরে ক্ষীরের সন্দেশটা বেশ জনপ্রিয় সবার কাছে। বিদেশেও এই মিষ্টি সরবরাহ করা হয়। মাগুরার মিষ্টির এমন মন ভোলানো স্বাদ হওয়ার কারণ খাঁটি দুধ এবং টাটকা ছানা। আমার কাছে মাগুরার সন্দেশ বা কাঁচাগোল্লা কে এক নম্বরেই মনে হয় সব সময়। এই খাঁটি দুধ আর টাটকা ছানার কারণে এটা যেমন চেহারা তেমন মোলায়েম এবং স্বাদ যে কোন জায়গার থেকে ভিন্ন। সাদা মিহি ঝুরি এই কাঁচাগোল্লা গরম রুটি, পরোটা দিয়ে খেতে অতুলনীয়। জীবনে অনেক এলাকায় বদলির চাকরির সুবাদে ঘুরেছি,কিন্তু আমাদের শহরের এই সন্দেশের মত মিষ্টিটা পাইনি কোথাও।এই ভিন্নতা মাগুরার ঐতিহ্য রক্ষা করতে একটা অবদান তো রাখেই।

কৃষিকর্মের এলাকা বলে এ অঞ্চলে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষের কোন অভাব নেই। তাই খাঁটি দুধের চালান পেতে দোকান গুলোর কোন অসুবিধা হয় না। এ জন্যই যুগ যুগ ধরে সুস্বাদু মিষ্টি তৈরিতে মাগুরা বেশ উপরের দিকে অবস্থান করে আসছে সেই সুদূর অতীত থেকেই। এ ছাড়া ময়রারা বংশ পরম্পরায় এ পেশায় জড়িত আছে বলে, ঐতিহ্য ধরে রাখতে তাদের জন্য খুব একটা কঠিন হয় না। আমরা যখন বেড়ে উঠেছি তখন বৈশাখী হোটেল ছিল নামকরা। এরপরে চলন্তিকা, আরো ছড়িয়ে আছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কিছু দোকান। নদীর পাড়ে সুগন্ধার নাম এখন মানুষের মুখে মুখে। যে কথা বলা হয়নি, মাগুরার বিভিন্ন মেলা বা আড়ং-এর মিষ্টির মজাও কিন্ত আলাদা। বাতাসা, দানাদার, কদমা, মটকা, ছাঁচ মিষ্টি এখনও পাওয়া যায় হাটবাজার আর আড়ং-এ।

মাগুরা আমাদের প্রিয় জেলা। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী যে কোন কিছুতেই আমাদের ভাল লাগা, আমাদের অহংকার। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই মিষ্টির চাহিদা দিনে দিনে আরো বেশী ব্যাপকতা লাভ করুক, এ তো আমাদের সকল মাগুরা বাসীর কাম্য।

অনন্যা হক: কবি ও লেখিকা

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology