আজ, মঙ্গলবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ২:৪৬


স্মৃতির ঘুড়ি

সুলতানা কাকলি : খুব সম্ভবত জানুয়ারি মাসের ছয় তারিখ আর্ন্তজাতিক ঘুড়ি দিবস। নীরবে দিনটি পার হয়ে গেল। এ দিবসটি পালিত হয়েছে কিনা তা টিভি বা সংবাদপত্রের মাধ্যমেও জানতে পারিনি।

সন্দেহ হয় আমার জানার মধ্যে ভুল থাকতে পারে। শৈশবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে প্রতিটি মহল্লার ছেলেদের বিকালে লাটাই ও ঘুড়ি হাতে মাঠে এসে জড়ো হতে দেখেছি। দেখতে দেখতে লাল-নীল, সাদা, সবুজ, হলুদ হরেক রঙের পতেংগা ঘুড়িতে সারা আকাশ ছেয়ে যেতো। যুদ্ধ বিমানের মত কোনটা গোত্তা খেয়ে মাটির কাছাকাছি এসে আবার সাঁসাঁ করে উপরে উঠে যেত কোনটা আবার অবিরত ডানে বামে চরকির মত ঘুরপাক খেত।

প্রথম পর্বে কে কত রকম কৌশলে ঘুড়ি ওড়াতে পারতো সেই পারদর্শিতা দেখানোর পর চলতো আসল প্রতিযোগিতা। সুতোয় মাঞ্জা দিয়ে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলাতে মত্ত হতো সবাই।উপর থেকে গোত্তা খেয়ে অপর ঘুড়িকে প্যাচ মেরে চলতো কাটাকাটি খেলার প্রতিযোগীতা। ঘুড়ি কাটা পড়লেই ধরার জন্য দে দৌড়, আমরা মেয়েরা একটু দূরে বসে ঘুড়ি ওড়ানোর দৃশ্য দেখতে পেলেই ধন্য হতাম।

তৎকালীন সময়ে ঘুড়ি বিশারদগণ নানান রঙের ঘুড়ি বানাতেন। দোকানীরাও বিক্রির জন্য থরে থরে ঘুড়ি সাজিয়ে রাখতেন। দেদারসে বিক্রি হতো সেই ঘুড়ি। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য ভাইদের কত বকুনি খেতে হয়েছে তার ইয়ত্বা নেই। তবুও ঘুড়ি ওড়াতেই হবে। এ এক অন্য রকম নেশা।

গ্রামীণ জনপদে ঘুড়ি ওড়ানোর আলাদা রকম আনন্দ ছিল। বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতের পাশে কিংবা মাঠে দুই রকমের ঘুড়ি ওড়াতে দেখেছি। বাঁশপাতার তৈরি চিল পাখির আকৃতি বলেই বোধহয় ওটাকে চিলে ঘুড়ি বলা হতো। আরেকটা চৌকো আকৃতির ছিল, সেটাকে সবাই কৌড়ে ঘুড়ি বলতো। কৃষকেরা আকাশে চিলে ও কৌড়ে ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে সারাদিন ক্ষেতে নিড়েনি দিত। ঘুড়িগুলো বাতাসে হেলে, দুলে একটানা উড়তে থাকতো। মেয়ে প্রজাতির কারণে হাতে ঘুড়ি লাটাই ধরতে না পারলেও, বড় ভাইদের সাথে মাঠে যেয়ে মন ভরে ঘুড়ি কাটাকাটি খেলা দেখেছি। তখন ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে মজার ছড়া শিখেছিলাম, “চিলে করে ঢিলেমিলে, কৌড়ে ধরে টান, পতেং আকাশে উঠে বলে আরও সুতো আন”।

এখন খোলা মাঠগুলো বিলুপ্ত। তাই বোধহয় ঘুড়ি দৃশ্যমান নয়। কিংবা রিক্রিয়েশনের জন্য নানাবিধ উপকরণ রয়েছে বিধায় ঘুড়ি নীরবে হারিয়ে গেছে। এখন নতুন প্রজন্মদের ঘরের মধ্যে পোল্ট্রি জীবন!বইয়ের ভারে ন্যুব্জ শরীর এবং এককেন্দ্রিক জীবনকে নির্দিষ্ট বিন্দুতে টেনে নেয়ার প্রচেষ্টায় রত সবাই।
সুলতানা কাকলি: লেখিকা

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology