মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : ৮ অক্টোবর। মাগুরা জেলার শ্রীপুরবাসীর কাছে বেদনাবিধূর এক দিন। একাত্তরের এই দিনে মহাম্মদপুর থানার বিনোদপুরে বিকেবি স্কুলের রাজাকার ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার ও পাকবাহিনীর সাথে আকবর বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন শ্রীপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জহুরুল আলম মুকুল। এদিন বিনোদপুর যুদ্ধে নিজেকে উত্সর্গ করে দেশপ্রেমের এক অনন্য উদাহরণ রেখে যান সাহসী এই মুক্তিযোদ্ধা।
৮ অক্টোবর ভোর রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিনোদপুর রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে আকবরবাহিনীর সাহসী যোদ্ধারা। অপারেশনের অগ্রভাগে থাকেন মো. জহুরুল আলম (শহীদ মুকুল), কমান্ডার বদরুল আলম, জহুর চৌধুরী, খন্দকার আবু হোসেন, শফি জোয়ার্দ্দারসহ কয়েকজন সাহসী ও বিভিন্ন অপারেশনে অভিজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা।
একসময় রাজাকার ক্যাম্পের নিকটবর্তী অবস্থানে এসে শত্রুদের ওপর গুলিবর্ষণ করতে থাকে মুক্তিযোদ্ধারা। এমন অবস্থায় রাজাকার ক্যাম্পের দ্বোতালা থেকে পাকিস্তান রেঞ্জার পুলিশ আধুনিক সব অস্ত্র দিয়ে পাল্টা গুলি চালালে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হন তরুণ মুক্তিযোদ্ধা মুকুল। মারাত্বকভাবে গুলিবিদ্ধ হন মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা। কমান্ডার বদরুল আলম, জহুর চৌধুরী, খোন্দকার আবু হোসেন পাক হানাদারদের প্রতিরোধে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু চাউলিয়া হয়ে পাকহানাদারদের বড় একটি সৈন্যদল পেছন থেকে ফায়ার দিলে অধিনায়কের নির্দেশ অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে উঠে আসে। সেই থেকে শ্রীপুর বাসীর কাছে শহীদ মুকুল চির অম্লান এক নাম।
এদিকে শহীদ মুকুল স্মরণে আজ শ্রীপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ইকরাম আলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক কমান্ডার মোল্লা নবুয়ত আলী।
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিনা মমতাজ, সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মশিয়ার রহমান, শ্রীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মুসাফির নজরুল, জেলা ইউনিট কমান্ডের সাবেক সাংগঠনিক কমান্ডার মিঞা শাহাদত হোসেন প্রমুখ।
উপজেলা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মিয়া নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিনোদপুর যুদ্ধ ও শহীদ মুকুল সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করেন ওই যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া গোলাম মোস্তফা, যুদ্ধকালীন সেকশন কমান্ডার শফিউদ্দিন জোয়ারদার, যুদ্ধকালীন সেকশন কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মজা ও মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ।