মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ক্রিসমাস। ২৫শে ডিসেম্বর যিশু খ্রিস্টের জন্মের দিনে এই উৎসবটি পালিত হয়।
কারণ খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট এদিনেই বেথলেহেম নগরীতে অলৌকিকভাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস যিশু খ্রিস্ট মানুষের রূপ ধরে পৃথিবীতে এসেছিলেন সব পাপ থেকে মুক্তি দিতে আর মানবিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে।
তার এই আগমনকে স্মরণ করে খ্রিস্টানরা শ্রদ্ধা ভালোবাসায় বিশ্বব্যাপী তাকে স্মরণ করেন ও জাকজমকপূর্ণভাবে দিনটি উদযাপন করেন। বাঙালিদের কাছে এই দিনটির পরিচয় বড়দিন হিসেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড: বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, “মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন।”
“যিশু যেহেতু বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য ধর্ম ও দর্শন দিয়ে গেছেন, বিশ্বব্যাপী বিশাল অংশের মানুষ তার দেয়া ধর্ম ও দর্শনের অনুসারী। যিনি এতো বড় ধর্ম ও দর্শন দিলেন ২৫শে ডিসেম্বর তার জন্মদিন। সে কারণেই এটিকে বড়দিন হিসেবে বিবেচনা করে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ।”
মি. ঘোষ বলেন, আঠার ও উনিশ শতকে ইউরোপীয়রা এসে এ অঞ্চলে খ্রিস্ট ধর্ম প্রচার করে। যারা ধর্মটি গ্রহণ করেছেন তাদের কাছে এটি আরও মহিমান্বিত বিষয়।
“বাঙালি যারা খ্রিস্টান তাদের অধিকাংশই এই ধর্মে রুপান্তিরিত হয়েছেন। তারা ভাবেন যিশু এমন একজন যিনি তাকে ধর্ম দিয়েছেন। তাই তার জন্মদিনটাই তারা সব আবেগ দিয়ে পালন করেন। এ কারণেই দিনটি তাদের কাছে বড়দিন হিসেবে বিবেচিত।”
তার মতে বাঙালি সমাজে আঠার শতকের শেষের দিকে এই বড়দিন পালনের চর্চা শুরু হয়েছিলো।
এবং একই সময়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইউরোপীয়দের অনুকরণে জন্মদিন পালনও শুরু করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বড়দিন উদযাপন এখন পাশ্চাত্য ছাড়িয়ে প্রাচ্যে পৌঁছে গিয়েছে। আলোর রোশনাই, সান্তাক্লজ, ক্রিসমাস ট্রি-তে সেজে ওঠে মহানগরের আনাচ-কানাচ। কেক, গিফটের সম্ভারে বদলে যায় দিনের মাহাত্ম্যও। এই বড়দিন হল যিশুর জন্মদিন। বেথলেহেম শহরে আজকের দিনেই মেরির কোলে জন্ম হয় যিশুর। তাই এই দিনটিকে বড়দিন বলা হয়। দিনটিকে merry christmas বলার পাশাপাশি ‘X-Mas Day’ তাও বলা হয়।
গ্রিক বর্ণমালা এবং অকাডেমির বাংলা অভিধানে এই বড়দিন নামের অর্থ পাওয়া যায়। অন্যদিকে, কোথাও কোথাও এই ভৌগলিক ব্যাখ্যাও রয়েছে।
যিশুখ্রিস্টের জন্মমাস বলে গোটা মাসটিকেই খ্রিস্টমাস বলা হয়। ব্যুৎপত্তি হল খ্রিস্টের মাস। জানা যায় মধ্যযুগীয় সময়ের ইংরেজি Christemasse বা Cristes mæsse শব্দ থেকে খ্রিস্টমাস কথাটি এসেছে। এই “Cristes” শব্দটি আবার গ্রিক Christos এবং “mæsse” শব্দটি লাতিন missa থেকে এসেছে বলে জানা যায় ১০৩৮ সালের একটি রচনা থেকে।
গ্রিক ভাষায় এক্স কথাটির অর্থ হল Christ। তাই খ্রিস্টের সংক্ষিপ্ত শব্দ হিসেবে এই ‘X-Mas’ কথাটি বলা হয়, এমনটাই মনে করা হয়ে থাকে। আবার এই দিনটিকে বড়দিন বলার ভৌগলিক ব্যাখ্যাও রয়েছে। যেমন- উত্তর গোলার্ধের দক্ষিণ অয়নান্ত দিবসেও দেখা হয়। অর্থাৎ ২৩ ডিসেম্বর থেকে দিন ক্রমশ বড় এবং রাত ছোট হতে থাকে, তাই ‘বড়দিন’, এমন ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় কোথাও কোথাও। এই নামের নেপথ্যে রয়েছে দার্শনিক মতও। মর্যাদার দিক থেকে এটি একটি বড়দিন, তাই নামকরণ, এ যুক্তিও শোনা যায়।
যদিও ২৫ ডিসেম্বরকে বড়দিন পালন করার প্রথা শুরু করেছে রোমানরা। অরেলিয়ান নামের এক রোমান রাজা ২৫ ডিসেম্বর এই দিনে মহাসমারোহে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও শুরু করেছিলেন বলে জানা যায়, “The Origins of Christmas” বইটি থেকে। বিশ্বজুড়ে তাই আজকের দিনটি বড়দিন হিসেবে পালিত হলেও, রাশিয়া, জর্জিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া, ইউক্রেন ও সার্বিয়ার মতো কয়েকটি দেশে ৭ জানুয়ারি পালন হয় বড়দিন। কারণ এই সব দেশে জুলিয়ান বা জর্জিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেব মেনে চলা হয়ে থাকে। আবার আর্মেনিয়ান ক্যালেন্ডার যারা মেনে চলেন তাঁরা ৬ জানুয়ারি বড়দিন পালন করে থাকেন।
তাই সেদিক থেকে দেখলে এই দিনের সঙ্গে আবার বড়দিনের উপরোক্ত অর্থের কোনও মিল নেই বললেই চলে। তাই বড়দিনের নামের অর্থ নিয়ে অনেকটাই, ‘নানা মুনির নানা মত’ রয়েছে। কিন্তু যে উৎসব পালিত হয় বিশ্বজুড়েই। যে উৎসবে ছোট থেকে বড় সকলেই মেতে ওঠেন আনন্দে, তাকে অর্থের বেড়াজালে কেবল বেঁধে রাখা যায় না।
সূত্র : বিবিসি, জিটিভি।