আজ, বৃহস্পতিবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সন্ধ্যা ৬:৪০

ব্রেকিং নিউজ :
মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান মাগুরা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ শ্রীপুরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক কাজী ফয়জুর রহমানের ইন্তেকাল মাগুরার শ্রীপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা! শায়লা রহমান সেতুর নির্মম মৃত্যুর বিচারের দাবিতে জাসদের মানববন্ধন সমাবেশে

যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রয়াস

সাগর জামান : একটি পরিবারের একজন যুবক সদস্য যদি অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হয়,তাহলে শুধু সেই পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, জাতি অধোপতিত হয়। দেশ ঝঞ্ঝা পীড়িত হয়ে পড়ে। একটি প্রজন্মের সব স্বপ্ন সম্ভাবনা ধুলিসাৎ হয়ে যায়। দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হয়।

আমাদের দেশে যুব সমাজ ব্যাপকভাবে অবক্ষয়ের অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নানা ধরনের সামাজিক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারে দুর্বৃত্ততা বাড়ছে। অসত সঙ্গের কারণে মাদকাসক্ত হয়ে যুবসমাজ বিপথগামি হচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন ভেঙে গেছে। যুক্ত পরিবারের প্রীতির সম্পর্ক এখন আর দেখা যায় না। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বেড়েছে। পিতা মাতার প্রতি সমীহ বোধ হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তানরা দুর্বিনীত আচরণ করছে। অনেক পরিবার আছে যেখানে পরিবারের সদস্যদের দেখা সাক্ষাত হয় না। অথচ এক বাড়িতে বসবাস করে।  সদস্যরা যে যার রুমে ঢুকে যায়,আবাসিক হোটেলের মতো।

প্রযুক্তির অকল্যাণ দিকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে। সভ্যতার অগ্রগতি, বিপুল সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে বটে।  প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে,দিয়েছে কল্যাণকর অনেক বিছু। কিন্তু হরণ করেছে আমাদের আবেগ মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে। প্রতি বারো সেকেন্ডে নাকি একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে,এতে বিচলিত হবার বোনো কারণ নেই,উদ্বেগের জায়গাটা হলো মানুষ মোবাইলে ফেসবুকে সারাক্ষণ বিভোর থাকছে।  স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের চির ধরছে। সৃষ্টি হচ্ছে সন্দেহ। বাড়ছে পারিবারিক কলহ। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আড্ডা হাসি আনন্দে সময় কাটানো এখন আর দেখা যায় না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি কিছু সূর্খ নৈতিক জ্ঞানহীন মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তারা ভুল ব্যবহার করছে এই যোগাযোগ মাধ্যমটিকে। এই সব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত হচ্ছে। মানুষের আবেগ ও অনুভূতিতে আঘাত হানার মাধ্যম হিসেবে এখন ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। নৈতিক মূল্যবোধ বিবর্জিত মানুষেরা প্রযুক্তিকে তাদের কুরুচিপূর্ণ অসুস্থ অশ্লীল বিনোদনের  ক্ষেত্র হিসাবে তৈরি করে ফেলেছে।

ফেসবুক ইন্টারনেট হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে যুব সমাজকে, ঘটাচ্ছে যুব সমাজের অবক্ষয়।এর জন্য প্রযুক্তির উন্নতি কিংবা আবিষ্কারকে দায়ি করা যায় না কোনোভাবেই। দায়ি অপব্যবহারকারিরা।প্রযুক্তির এই উন্নতি  আমাদের ভৌগোলিক দূরত্ব কমিয়েছে। কিন্তু বাড়িয়েছে পারস্পরিক সম্পর্কের দূরত্ব অনেক বেশি।

যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম আরো একটি কারণ হলো মাদক। আমাদের দেশে অপার সম্ভাবনাময় যুবসমাজ মারাত্বক মাদক ঝুঁকিতে রয়েছে। মাদক দ্রব্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। ফলে খুব সহজে মাদকে আসক্ত হওয়ার সুযোগ পায় তরুণ সমাজ। অসত বন্ধুদের প্ররোচনায় প্রথমে কৌতুহল মেটাতে মাদক গ্রহণ করে। পরে আসক্ত হয়ে পড়ে একটু একটু করে।

মাদক আমাদের যুব সমাজকে চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। আমাদের তরুণ সমাজকে বাঁচাতে মাদক দ্রব্য নিয়ণ্ত্রণে সবাইকে একযোগে বাজ করা প্রয়োজন।

মাদকাসক্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনতে পারে না কখনো। বরং শুদ্ধ সমাজ গঠনে বাধা সৃষ্টি করে। সমাজকে গভীর সংকটের দিকে নিয়ে যায়।মাদকাসক্তির ফলে বিভিন্ন শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক জটিলতা সৃষ্টি হয়। শরীরে নানা অসুখ জেঁকে বসে। শারীরিক সমস্যার মধ্যে খাদ্যে অরুচি, পুষ্টিহীনতা,শরীরের বিভিন্ন স্থানে সংক্রমণ, বিভিন্ন অঙ্গে ক্ষতিকর রোগ সৃষ্টি হয় যার শেষ পরিণতি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। মানসিক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন হওয়া। মাদকাসক্তির ফলে ব্যক্তি তার স্বাভাবিক আচরণ হারিয়ে ফেলে। স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, ধৈর্যচ্যুতি ইত্যাদি নেতিবাচক আচরণ ব্যক্তির মধ্যে প্রকট হয়ে উঠে যা ক্রমাগত তাকে মানসিক রোগীতে পরিণত করে। সামাজিক সমস্যার মধ্যে চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ, সামাজিক সহিংসতা, নারী নির্যাতন,বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি অন্যতম। যুব সমাজের অবক্ষয় রোধে মাদক নিয়ণ্ত্রণ জরুরি। এই বিষয়টিকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত যথাযথ আইন থাকা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর  উদাসীনতা  না থাকলে পুরোপুরি মাত্রায় দূর না হলেও অনেকাংশে মাদকের ভয়াবহতা কমানো সম্ভব হবে।

যুব সসমাজের অবক্ষয় রোধে প্রয়োজন রাষ্ট্র ব্যক্তি পরিবার সমাজের সম্মিলিত প্রয়াস। সন্তান কোনো অস্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে কিনা, কেমন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিশছে ইত্যাদি বিষয়ে পরিবারের খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া পরিবারের কেউ মাদকাসক্তির দিকে ঝুঁকে পড়লে তাকে মাদকের খারাপ,ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলে-মেয়েদের খেলাধুলাসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখাও মাদক থেকে তাদের দূরে রাখার একটি উপায় হতে পারে।সমাজ বিনির্মাণে যুবসমাজের হিতৈষী ভূমিকা রাখার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।  মানবিক বোধের উন্মেষ ঘটানোর জন্য জন কল্যাণকর কাজে তাদের লাগাতে  হবে। বেকারত্ব, সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক বিরোধ দূর করতে হবে। কেউ যেন হতাশাগ্রস্ত না হয়ে পড়ে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তাহলেই মুক্তি পেতে পারে যুবসমাজ, যে যুবসমাজ জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে যুগেযুগে।
সাগর জামান, কবি, সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology