মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় সুখেই বসবাস করছিলেন সাজ্জাদ। কিন্তু স্বামীর অসুস্থতার কারণে প্রিয়তম স্ত্রী রূপালী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। চলাফেরায় অক্ষম সাজ্জাদ এখন বৃদ্ধ বাবা-মায়ের গলগ্রহ হয়ে পড়ে আছেন ভাঙা ঘরের মেঝেতে। কিডনি আক্রান্ত সাজ্জাদ স্বপ্ন দেখেন আবারও সে ফিরে যেতে পারবে তার পুরণো কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। কিন্তু কীভাবে সেটি সম্ভব জানা নেই তার।
বেসরকারি সিকিউরিটি এজেন্সির কর্মচারী সাজ্জাদ (৩৬) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বড়তলা গ্রামের দরিদ্র শওকত বিশ্বাসের ছেলে। আট মাস আগে অসুস্থাবস্থায় ফিরে এসেছেন নিজের গ্রামে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বছর দশেক আগে একই গ্রামের জামাল বিশ্বাসের মেয়ে রূপালীর সঙ্গে বিয়ে হয় সাজ্জাদের। বিয়ের পর স্ত্রীও ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ নেয়। দু’জনের আয়ে ভালই চলছিলো তাদের। কিন্তু নিজের অসুস্থতার কারণে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। দুটো কিডনিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ঔষধ সেবন চলছে। ক্যাপসুল ট্যাবলেট মিলিয়ে দিনে ১২টি ওষধ খেতে হয়। আর সপ্তাহে দুইদিন ডায়ালাইসিসের জন্যে যেতে হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। যেখানে প্রতিবারই খরচ অন্তত ৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে পরিবারের যা কিছু সঞ্চয় চিকিসার জন্যে তার সবই শেষ। অথচ ভাঙা ঘরের মেঝেতে শয্যাশায়ি সাজ্জাদের চোখে মুখে বেঁচে থাকার আকুতি। এদিকে কর্মক্ষম স্ত্রী রূপালি সম্প্রতি দেড় বছরের শিশু পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় একেবারেই দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে। এখন তার একমাত্র নির্ভরতা বৃদ্ধ বাবা-মায়ের উপর।
বড়তলা গ্রামে নিজের চার শতক জমির উপর তাদের একমাত্র খুপড়ি। যেখানে বারান্দায় কাঁদা মাটির মেঝেতে শীতবস্ত্রের অভাবেও কাতর হয়ে পড়ে আছেন সাজ্জাদ।
সন্তানের এমন অবস্থায় নিরুপায় বৃদ্ধ বাবা শওকত হোসেন বাড়ির পাশে গয়েশপুর বাসস্ট্যাণ্ডে নাইট গার্ডের চাকরি নিয়েছেন। যেখানে দৈনিক আয় মাত্র ১শত টাকা। স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণ আর চিকিৎসার কথা ভেবে শওকত বিশ্বাস পড়েছেন বিশাল পাথারে।
শওকত বিশ্বাস বলেন, ভাঙা ঘরে থাকি। কখনও সরকারি কোনো অনুদানও পাইনি। এখন ছেলের ওষধ, ডায়ালাইসিসের জন্যে প্রতি মাসেই অনেক টাকার দরকার। কিন্তু এত টাকা কীভাবে যোগাড় করবো জানি না।
তবে খামারপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী নূর ইসলাম কয়েক দফায় ডায়ালাইসিসের জন্যে কিছু টাকা যোগাড় করে দিয়েছেন বলেও তিনি জানান।
অস্ফুট কণ্ঠে অসুস্থ সাজ্জাদ বিশ্বাস জানান, এমন অসুস্থ্যতায় স্ত্রী পুত্রও পাশে নেই। বৃদ্ধ বাবা-মায়ের বোঝা হয়েও থাকতে চাই না। কিন্তু কিছুই তো করার নেই!
এ বিষয়ে স্থানীয় গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে সাজ্জাদের পরিবারের খবর নিয়েছি। ইতোমধ্যেই তার সহায়তার জন্যে এই আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখরের কাছে আবেদন পত্র দেয়া হয়েছে।
পাশাপাশি ব্যাক্তিগতভাবে নিজেও সহায়তার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জানান।