জসীম উদ্দীন, মাগুরা : ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মাগুরা জেলার চার উপজেলা—মাগুরা সদর, শালিখা, শ্রীপুর ও মোহাম্মদপুরের জনজীবন।
হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও জেলার প্রধান ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে, এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
টানা কয়েক দিনের শৈত্যপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু, নারী ও বয়স্করা। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে নিম্নআয়ের ও দুস্থ মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে সর্দি, কাশি, জ্বর ও শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে এসব মানুষ বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল শতভাগ। মাগুরা কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের যন্ত্রপাতি নষ্ট থাকায় মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, শীতের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার কারণে শ্রমজীবী মানুষদের কাজে বের হতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তীব্র শীতে সবজি ক্ষেত ও বীজতলা ক্ষতির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
শালিখা উপজেলার এক হোটেল শ্রমিক মোশাররফ হোসেন বলেন, “সারারাত কনকনে ঠান্ডা থাকে, দিনের বেলাতেও একই অবস্থা। আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টের শেষ নেই। কাজ না করলে সংসার চলে না, তাই বাধ্য হয়ে বের হতে হয়।”
শালিখা উপজেলার শতখালী গ্রামের কৃষিশ্রমিক আবু সাঈদ ও মহররম আলী জানান, “কয়েক দিন ধরে এত ঠান্ডা যে কাজে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। হাত-পা বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে যায়। তবুও সংসারের কথা ভেবে কাজে যেতে হচ্ছে।”
শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইমুম নেসা বলেন, শীতকালে শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের সুরক্ষায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। ঘন কুয়াশা ও ঠান্ডার মধ্যে শিশুদের বাইরে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে এবং গরম পোশাক ব্যবহারে জোর দেন তিনি।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, চলতি সপ্তাহে জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি কৃষক ও সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন, ক্ষেত ও বীজতলা রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং শীতজনিত রোগ থেকে বাঁচতে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।