আজ, রবিবার | ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সন্ধ্যা ৭:৪৯

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরা শহরে চারতলা ভবন থেকে লাফিয়ে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা! আবারো সিআইপি সম্মাননা পেলেন বিজনেস আইকন মাগুরার আব্দুল মুক্তাদির শ্রীকোলের ১০টি কেন্দ্রে শাহীনের ভোট মাত্র ১৬৪টি! শ্রীপুর উপজেলায় নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাজন ৪৩টি কেন্দ্রে প্রথম হয়েছেন বোনের বাড়িতে গিয়ে মাগুরা সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা মাগুরা সদর উপজেলায় রানা শ্রীপুরে রাজন নির্বাচিত মাগুরা সদর ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মাগুরা সদরে রানা ও শ্রীপুরে রাজনের দিকেই সবার নজর মাগুরায় ঋষিপাড়ার সদস্যদের মধ্যে কৃষিব্যাংকের সহজশর্তে ঋণ বিতরণ মাগুরায় রানাকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন ছাড়লেন ভিপি জাহাঙ্গীর

পবিত্র মহিমান্বিত ঈদ : সেকালের স্মৃতিকথা

অনন্যা হক : পাড়া বা মহল্লার সাথে আন্তরিকতা ও সখ্যতা শব্দ দুটোর এক বিরাট যোগসূত্র ছিল এক সময়। ঠিক তেমনি এক সময়ে বেড়ে উঠেছি আমি। মানুষের সাথে মানুষের সখ্যতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত দেখেছি তখন। যে কোন পালা পার্বণেই এটা বোঝা যেতো। পবিত্র ঈদ এলে আরো বেশি। ঈদ কত মহিমান্বিত এবং আনন্দময় ভাবে উদযাপন হতো তখন, সকলের মনেই তার রেখাপাত আঁকা হয়ে আছে। সময়ের সাথে জীবন অনেক পাল্টে গিয়েছে। সেদিনের সেই ঈদের আমেজের রেশ এখনও মনে বয়ে বেড়াই।

ঈদে নতুন পোশাক এক চিরন্তন আনন্দ ও ঐতিহ্য। তখন ঘরে ঘরে প্রাচুর্যের এত ব্যাপকতা ছিল না।তাই পোশাকের বাহুল্যও ছিল সীমিত। সারা বছর অপেক্ষা করে ঈদে একটা নতুন জামার জন্য আমরা উন্মুখ হয়ে থাকতাম। ঐ জামা কেন্দ্রিক আনন্দের ব্যাপ্তিও থাকতো কয়েক দিন ধরে। মনে পড়ে পোশাক বানিয়ে লুকিয়ে রাখার কথা।ঈদের আগে কেউ কাউকে দেখাতে চাইতো না। যেন আগে দেখে ফেললে কি বিশাল ক্ষতি। কি নিস্পাপ সরল আবেগ ছিল তখন মনে! এখনকার প্রজন্মের কাছে যা অত্যন্ত হাস্যকর বলে মনে হবে।ছোট ছোট বিষয়ের ভেতরে কত আনন্দ লুকিয়ে থাকতে পারে সেটা বোঝার সৌভাগ্য তাদের হয়নি পরিবেশের কারণে।

রোজার শুরু থেকে শুরু হতো ঈদের আমেজ। ঈদ যত কাছে এগিয়ে আসতো, ভেতরে এক টানটান খুশির হাওয়া বয়ে যেতো। মফস্বল শহরের ঈদগুলো বড় শহর থেকে একটু বেশী জমজমাট ভাবে পালিত হয় সব সময়। শহরের বেশীর ভাগ লোক পরিচিত থাকায় ঈদের জামাত হয় উৎসব মুখর। পরিচিত জনের কোলাকুলির মাধ্যমে হৃদ্যতা বিনিময়ে এক মনোরম দৃশ্যের আবহ তৈরি হয়।

প্রতিটা পাড়া আত্মীয় স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশীদের আনন্দে মুখরিত হয়ে উঠতো।যারা বাইরে কর্মস্থলে অবস্থান করেছে, তাদের নিজ শহর অভিমুখে ছুটে যাওয়া যেমন খুশি,তাদের জন্য অপেক্ষা করে থাকাও তেমন খুশির। এখন এসব আনন্দে যেন অনেকটা ভাটা পড়ে গিয়েছে। অনেক গুটিয়ে গিয়েছে মানুষ নিজেদের গন্ডির ভেতরে জীবনের জটিলতায়। আমাদের সময় যে কোন বাসায় যাতায়াত ছিল অবলীলায়।মানুষ মানুষকে গ্রহণ করতো সানন্দে, এটাই ছিল খুব স্বাভাবিক রেওয়াজ।

ঈদে যতরকম রান্না হোক না কেন, ঈদের সেমাই এর চাহিদা ছিল তুঙ্গে। খাঞ্চা ভরা দুধ সেমাই , জর্দা সেমাই, চালের জর্দা ডেজার্টের অবস্থানটা পুরোপুরি দখল করে রাখতো। এখন মানুষ বৈচিত্রের খোঁজে অনেক ভিন্নতা আনলেও, ঈদ মানেই সেমাই, জর্দা, পায়েশ আমাদের মনে তেমনই সমান কদর পায়।

ছিল মুরব্বীদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম এর প্রচলন, যার সাথে ছিল নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে সালামি প্রাপ্তির এক আনন্দ। আমাদের কাছে যখন খুব অল্প টাকাই ছিল বিরাট এক পাওনার মতো।তখন তো অভিভাবকদের মধ্যে সন্তানদের পকেট মানি দেয়ার কোন বিষয়ের তেমন কোন চল ছিল না। টাকা আমাদের কাছে তখন এক দুষ্প্রাপ্য বস্তুর মতো। তাই ঐ সামান্য টাকা যথেষ্ট খুশির কারণ ছিল।দশ টাকা সালামিতেও কত আনন্দ হতো। আর নোটটা যদি হতো চকচকে তাহলে তো আরও ভাল।

খাওয়ার পর্ব চলতো বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে,হয়তো নিজের বাড়িতেই খাওয়া বাকী থেকে যেতো ঈদের দিন। ভাইবোন, বন্ধু মহলে চলতো এক লাগাম হীন ইচ্ছে স্বাধীন চলাফেরা এবং আড্ডা। অনেক বিধিনিষেধ শিথিল থাকতো ঈদ উপলক্ষে।

সারা দিন ঘোরাঘুরি শেষে, রাতের আকর্ষণ ছিল হানিফ সংকেত এর ইত্যাদি। এক সাথে অনেকে জড় হয়ে উপভোগ করতাম সেই প্রত্যাশিত বিটিভির ঈদ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান।

আজ রোযা শেষ হলো। এক মাস সিয়াম সাধনার পর মানুষ উন্মুখ হয়ে থাকে এই বিশেষ দিনটির জন্য। কষ্টের পর আনন্দের যেমন সুখ, তেমন সংযমের পর মুক্ত হওয়ার আনন্দ বয়ে আনে পবিত্র ঈদ। তবে এই সংযম শুধু না খেয়ে থাকার মাঝেই সীমাবদ্ধ সংযম নয়, এই সংযম সাধনা অবশ্যই আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং আত্মিক উন্নতির জন্যই নির্ধারণ করা!

এখন সময়টা ভীষণ ভাবে ভিন্ন। এক ভয়াবহ কঠিন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে আমরা জীবন অতিবাহিত করছি। করোনা মহামারি আমাদের জীবনের সব সুখ শান্তি কেড়ে নিয়েছে।তার মধ্যে কেটেছে গত বছরের রোযা এবং ঈদ, বহু মানুষের বুকে এক স্বজন হারানোর এক অসীম কষ্ট নিয়ে। আবার এ বছরেও তার থেকেও বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে আমাদের জীবনে এলো রোযা। কঠিন এক জীবন মরণ পরীক্ষার ভেতরে মানুষ তাকিয়ে আছে সামনে আশার আলো দেখার জন্য। আগেকার সেই ঈদ উদযাপন আমাদের জীবনে এখন শুধুই স্মৃতি।

আবার এলো ঈদ। যেমন করেই হোক, প্রতিটা ঈদ মানুষ একত্রিত হয়ে এক মিলন উৎসবে পরিণত করতে চায়। ছুটে চলে অগণিত মানুষ শত বাঁধা বিপত্তি পায়ে মাড়িয়ে আত্মহারা হয়ে, দিগ্বিদিক হারা হয়ে মাটির টানে, নাড়ির টানে, ভালোবাসার টানে। কিন্তু সেই সময়টা এখন আমাদের কাছে অধরা।

এবারের ঈদ উদযাপনে মিলনোৎসব হিসেবে ভাববার কোন অবকাশ নেই আমাদের কাছে। রোযার সংযমের মাধ্যমে মানসিক আত্মশুদ্ধি হোক আমাদের সকলের আকাঙ্ক্ষা। প্রার্থনাহোক সৃষ্টিকর্তার কাছে সকল বিশ্ববাসীর সুস্থতার  জন্য, পৃথিবীতে সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদেরকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এখন  একমাত্র প্রত্যাশা পৃথিবী মহামারি মুক্ত হোক। শুধু সময়ের পার্থক্য, কিন্তু পালনের মহিমা খুব পবিত্র ভাবেই এখনও মানুষের মাঝে বিরাজমান। সুস্থ হোক পৃথিবী, মঙ্গল হোক প্রতিটি মানুষের!
অনন্যা হক: কবি, লেখিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology