আজ, রবিবার | ৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | রাত ১২:২০

ব্রেকিং নিউজ :

গুনী চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্নার মৃত্যুতে সর্বমহলে শোক

গুনী চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্নার মৃত্যুতে সর্বমহলে শোক

মাগুরা প্রতিদিন : মাগুরার গুনী চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্নার মৃত্যুতে মাগুরার বিভিন্ন মহলের মধ্যে শোক বিরাজ করছে। জেলার বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক্ রাজনৈতিক সংগঠণ এবং সুধিমহলের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

মাগুরার সামাজিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অত্যন্ত পরিচিত মুখ সংকট, দূর্ণীতি এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর চিত্রশিল্পী শামসুজ্জামান পান্না ৮ জুন ৫৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রায় দুই বছর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তিনি শহরের ছায়বিথী সড়কের বাড়িতে বাস করছিলেন। সেখানেই তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পরে সন্ধ্যায় নামাজে জানাযা শেষে পৌর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শামসুজ্জামান পান্না ছাত্রাবস্থায় রাজশাহী আর্টস কলেজের ফাইন আটর্সের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি মাগুরায় ফিরে আর্টস স্কুল খোলেন। সাম্যবাদী পান্না কাজ করেছেন মুখ ও বধিরদের অধিকার আদায়ে। সুস্থাবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্তি শিশুদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তার এবং নৈতিকতা গড়ে তুলতে কাজ করে গেছেন। শত অভাবের মাঝেও শিশুদের কল্যাণে কাজ করছেন। দুঃস্থ শিশুদের উন্নয়ন ও বিকাশে তিনি সাইকেলে চড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে যেতেন। তাদের সাথে গল্প করতেন। ছবি আঁকা শেখাতেন। তিনি এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।

মাগুরার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী, আজীবন সাংস্কৃতিক লড়াই এর অগ্রসর পথিক শামসুজজামান পান্নার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের কেন্দ্রীয় কার্যকরি কমিটির সদস্য জাহিদুল আলম।

গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মাগুরা জেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রানা আমির ওসমান।

শোক প্রকাশ করেছেন মাগুরা জেলা জাসদের সভাপতি সৈয়দ অহিদুল ইসলাম ফণি, সাধারণ সম্পাদক সমীর চক্রবর্তী সহ জেলার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দও।

গুনী চিত্রশিল্পী পান্নার মৃত্যুতে তাঁর শুভানুধ্যায়িদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সাংবাদিক জাহিদ রহমান তার প্রতিক্রিয়ায় লিখেছেন,

“বিদায় বন্ধু পান্না….

পান্না আমাদের কলেজ ( মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ারদী  কলেজ) বন্ধু।  কলেজ পেরিয়ে পান্না পরে রাজশাহী ফাইন আর্টস কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে ছবি আঁকাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে।

সকালে লাভলু জানালো পান্না শেষ বিদায় নিয়েছে (ইন্না-লিল্লাহে. রাজিউন) । লাভলুর ফোন ছেড়ে মাগুরা কলেজ মাঠের সেই সবুজ ঘাসে পা রাখার দিন মনে করছিলাম।  পান্নার সাথে প্রথম  পরিচয় হয়েছিল ওই সবুজ ঘাসে বসেই এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের শুরুতে।

পান্না অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিল। মাঝে মাঝে ফোনে কথা হতো । এইতো কদিন আগে মাগুরা বইমেলার সময় ফোনে বলল, তাঁকে যেনো আমার লেখা কিছু বই দেই। সে বাচ্চাদের উপহার হিসেবে দেবে। ওকে অনেকগুলো বই দিয়েছিলাম। পরে ফোনে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেনি পান্না।

পান্না ছিল শ্রেফ এক প্রলেতারিয়েত। বাট চোখে ছিল স্বপ্ন।  অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের লড়াইটা করেছে মন থেকে।

দরিদ্র বাচ্চাদের বিনা পয়সায় ছবি আঁকা শেখাতো সে। রঙ ও তুলির মাঝে যে অপার আনন্দ আছে মাগুরার শত সহস্র দরিদ্র বাচ্চাদের মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াতো গ্রাম থেকে গ্রামে।  মনে আছে করোনার সময় দরিদ্র বাচ্চাদের হাতে এক প্যাকেট খাবার তুলে দিতে বন্ধুদের সাহায্য প্রার্থী হয়েছে সে। বন্ধু ওবায়দুল, ইকবাল, সোহেল, গৌতম, লাভলু, টিটো, সঞ্জয়, লিপু, ভুট্ট, মনজু, সাগরসহ আমি নিজেও লাভলু মারফত আমরা ওর পাশে দাঁড়িয়েছি।

পান্না নীরবে নিভৃতে এভাবেই নিজেকে উজাড় করেছেন দরিদ্র অধিকার বঞ্চিত শিশুদের জন্য। কিন্ত অভাব যে তাঁকে কত কষ্ট দিয়েছে তা কাউকে বলেনি। এই মায়ার সংসার ত্যাগ করে চলে গেল বন্ধু চিত্র শিল্পী পান্না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রাক্তণ ছাত্র, ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজের ফাইন আর্টস বিভাগের শিক্ষক আবু সাদয়াত মোহাম্মাদ সোহেল, ফেসবুকে তার শোক প্রকাশ করেছেন।

একইভাবে শোক প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ব্যবসায়ী সহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology