নিজস্ব প্রতিনিধি: ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার সকালে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন ভীষণরকম জমে উঠেছে।
মাগুরার এই শ্রীপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট প্রার্থী চারজন। চার প্রার্থী হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন (দোয়াতকলম), প্রয়াত অধিনায়ক আকবর হোসেন মিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র শরিয়তউল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন (মোটরসাইকেল), প্রয়াত জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার মোল্লা নবুয়ত আলীর পুত্র এম. এম. মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম (ঘোড়া) এবং খোন্দকার আসরার এলাহী (আনারস)।
প্রতিদ্বন্দ্বি চার প্রার্থীর মধ্যে তিনজন শ্রীকোল ইউনিয়নের এবং একজন আমলসার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তবে চেয়ারম্যান পদে মূলত তিন হেভিওয়েট প্রার্থীকে নিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা।
সরজমিনে দেখা গেছে, নির্বাচনী উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা এবং হাটবাজার এখন সরব ও সরগরম। তিন প্রার্থীই নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য নেতা-কর্মী-সমর্থক-শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে উপজেলার প্রতিটি গ্রাম-পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন। মানুষের সাথে কথা বলছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন। তিনজনই বিভিন্ন সভা-পথসভায় বক্তব্য প্রদান করে নিজের পক্ষে জনমত তৈরিতে যুক্তি তুলে ধরছেন।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে উপজেলা নির্বাচন বয়কট করার কারণে বিএনপি সমর্থিত কেউ চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করেননি। তবে সামাজিক দলের বিবেচনায় অনেক জায়গাতেই বিএনপির নেতাকর্মীরা কারো কারো সমর্থনে কাজ করছেন।
সাধারণ ভোটার এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্টদের মতে, বেশ কয়েকটি কারণেই শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন নিয়ে এবার নানান আলোচনা জমে উঠেছে। প্রথমত: এই নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই-ই আওয়ামী লীগ সমর্থিত। দ্বিতীয়ত: এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হওয়ার কারণে প্রার্থীরা পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে মুক্তমনে মানুষের দুয়ারে যাচ্ছেন। তৃতীয়ত: পুরাতন এবারের নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রাম এবং শরিয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন। এ দুজনই শ্রীপুরে আজীবন নেতৃত্বদানকারী দুুই বীর মুক্তিযোদ্ধার উত্তরাধিকারি। এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের আগে অবশ্য একবার উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু শ্রীকোল ইউনিয়নের আলোচিত চেয়ারম্যান কুতুব উল্লাহ কুটির ছোট ভাই শরিয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া রাজন এই প্রথম উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে আলাদাভাবে উপজেলাবাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। নবাগত প্রার্থী হিসেবে তিনি উপজেলা বিনির্মাণের স্বপ্ন আর শত সম্ভাবনার অঙ্গীকার উচ্চারণ করে চলেছেন।
এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সরাসরি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনকে। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন উর রশীদ মুহিতও দুবারের চেয়ারম্যান মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীনের পক্ষে সরাসরি ভোট প্রার্থনা করছেন।
অন্যদিকে শরিয়ত উল্লাহ হোসেন মিয়া রাজনের পক্ষে শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোল্লা নুুরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইসমত আরা হ্যাপী, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জাকির হোসন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট হারুন-অর-রশীদ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন কানন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান কনক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক খোন্দকার শফিকুল ইসলাম রবি, সহ দপ্তর সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম টোকন সহ অন্যান্যরা সমর্থন জানিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী এম এম মোতাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শ্রীপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মসিয়ার রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং গয়েশপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম মোল্লা, নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়াসহ অন্যান্যরা নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালে শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আনারস প্রতীকে ৩৯ হাজার ১০৮ ভোট পেয়ে জয়ী হন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ কুমার সাহা ২৪ হাজার ৭৭৪ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে সরাসরি কাজ করার কারণে ওই নির্বাচনে পঙ্কজ কুমার সাহার পরাজয় ঘটে। বিগত নির্বাচনের সেই ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পঙ্কজ কুমার সাহা। এর আগে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বদরুল আলম হিরো ৩৭ হাজার ৩৭৩ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হুমাউন উর রশীদ মুহিত ৩৩ হাজার ১১ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সেসময় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের কৌশলগত বিরোধীতার কারণে মুহিত অনাকাঙ্খিতভাবে পরাজিত হন।
এদিকে ২০০৯ সালে মিয়া মাহমুদুল গনি শাহীন প্রথমবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দাঁড়িয়ে হেভিওয়েট প্রার্থী মো. গোলাম মোক্তাদের রহমানকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।