মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : এবার বিচারের দাবি জানিয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হাজির হলেন মাগুরার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনেরত প্রতিনিধি ও শিল্পীরা। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে করোনায় কর্মহীন শিল্পী কলা কুশলীদের সাহায্যের ৪৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিতরণে অনিয়ম দূর্ণীতির বিচার দাবিতে তারা মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগপত্র দিয়েছেন।
জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পেশকৃত অভিযোগপত্রে মাগুরা জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার মোঃ জসিম উদ্দিন ও সহ-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীসহ কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ বণ্টনে নানা অনিয়ম দূর্ণীতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
জেলার ২৬ জন সাংস্কৃতিক কর্মী স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আবেদন যাচাই বাছাইয়ে জেলার সক্রিয় কোন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনের কোন প্রতিনিধিই উপস্থিতি ছিলেন না। তালিকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী শুধু তার নিজ পরিবারেরই ১৫ জন সদস্যের নাম শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছেন। শুধুমাত্র ব্যক্তিগত পরিচয় থাকায় বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সহযোগিতায় জেলা শহরে ২টি ফ্লাট ও একাধিক বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিকের স্ত্রীকেও দেয়া হয়েছে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীর প্রনোদনা। বিশ্বজিতের সহায়তায় শিল্পকলার সংগীত শিক্ষক অজিত রায় ও অপর একটি সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুকুমার পাল বিভিন্ন এলাকা থেকে অশিল্পীদের নামের তালিকা সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার কমিশন বাণিজ্য করেছে। এভাবে ওই চক্রটি একদিকে যেমন প্রকৃত শিল্পীদের বঞ্চিত করেছেন অপর দিকে গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অথচ মাগুরার বহু সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সংগঠনের বাইরে থাকা অনেক গরীব শিল্পী কোন প্রণোদনাই পাননি। এমনকি ওই প্রণোদনা দেয়ার তথ্যও তাদেরকে জানানো হয়নি।
তালিকায় দেখা যায়, ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্রে অন্য জেলার বাসিন্দাদের অনেকেই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। শিল্পকলার সরকারি কর্মচারির পরিবারের সদস্যের নামেও নেয়া হয়েছে এ সহায়তা। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি মহতি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। যা নিয়ে ভেতরে ভেতরে বিক্ষুব্ধ জেলার সাধারণ শিল্পী সমাজ।
শিল্পীরা অভিযোগে জানান, সরকারিভাবে যখন করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পীদের সহায়তা দেয়ার জন্য নামের তালিকা আহবান করা হয় তখন জেলা কালচারাল অফিসার, শিল্পকলার সাউন্ড অপারেটর কামরুজ্জামান, সহ সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, অজিত রায়সহ একটি অসাধুচক্র একত্রে বিভিন্ন পরিচিত ব্যক্তির নাম ও আইডি নম্বর সংগ্রহ করে নিজ মনগড়া একটি তালিকা প্রেরণ করে। কিন্তু সেক্ষেত্রে প্রকৃত শিল্পীদের বিষয়টি জানতেই দেয়া হয়নি। অথবা তাদের আবেদন গ্রাহ্যই করা হয়নি। যার ফলে প্রকৃত শিল্পীরা অনেকেই বঞ্চিত হলেও দূর্ণীতির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নাম দিয়ে তালিকা প্রেরণ করা হয়। ফলে সরকারের এত বড় একটি মহতি উদ্যোগ ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। শিল্পী সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর মত মানুষ মুখে প্রগতিশীলতার কথা বললেও স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতির মাধ্যমে জেলার শিল্প সংস্কৃতির ব্যাপক ক্ষতি করছেন। শিল্পকলা একাডেমীকে নিজের পরিবারিক সম্পত্তির মত ব্যবহারের ফলে শিল্প সংস্কৃতিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলার শিল্প সংস্কৃতির বিকাশে বিশ্বজিৎ গংদের হাত থেকে সংস্কৃতিকে রক্ষার আহবান জানান তারা।
মাগুরা জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাগুরা জেলা প্রশাসক ডক্টর আশরাফুল আলম। তবে অনুদান বিতরণে কোনপ্রকার দূর্ণীতি হলে তার বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই একটি সাধারণ সভা করে সকল শিল্পীদের নিয়ে শিল্পকলাকে আরও গতিশীল করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন তিনি।