শ্রাবণী সুর: নারী সাফ ফুটবলে নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জয় করেছেন বাংলাদেশের নারীরা। ছেলেদের ফুটবলে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের সবচেয়ে পেছনের দিকে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান লজ্জাজনক। এ লজ্জা থেকে জাতির মাথা উঁচুতে তুলে ধরলো সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের দল।
বিজয়ের জোয়ারে দেশ ভাসছে। আজ বিজয়ীনীরা দেশে ফিরেছে। তাদের বিমানবন্দরে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী নিজে স্বাগত জানিয়েছেন। ফুলের তোড়া মালায় বরণ করা হলো তাদের। ছাদখোলা গাড়ীতে ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করার আয়োজন দেখেছি ঘুরতে শুরু করা দেখেছি। দলনেতা সাবিনা, গোলকিপার রূপনাসহ অন্য খেলোয়াড়রা বিজয়ীর বেশে দেশের মাটিতে ফেরার আনন্দে উদ্বেল। তাদের খেলার প্রাণের জায়গা ফুটবল ফেডারেশনে যাবে তারা ধারাবাহিক কর্মসূচি অনুযায়ী।
হিমালয়ের পাদদেশে নেপালের মাঠে ভারত কন্যাদের হারিয়ে বিজয়ী বঙ্গললনা হলো রয়েল বেঙ্গল মা। আমাদের টাইগাররা ক্রিকেট বিজয়ী হলে আমরা ঠিক এমনই আনন্দিত হই আপ্লুত হই। দেশে ফিরলে একই রকমভাবে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সাফ গেমসে জয়ী হবার পর একটা ভয়ংকর খবর বেরিয়ে এলো। ধামাচাপা সত্য সকলের চোখ বিস্ফারিত হলো। যেটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। তা হলো জাতীয় দলের নারী ফুটবলারদের ‘বেতনবৈষম্যের নজির বিহিন হিসাব কিতাব। একটি জাতীয় দৈনিকে দুই বছর আগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ইনফোগ্রাফ নতুন করে ফেসবুকে পোস্ট করে অনেকে দাবি করছেন, জাতীয় দলের পুরুষ ফুটবলারদের তুলনায় অনেক কম বেতন পান নারী খেলোয়াড়রা। কত কম তুলে ধরা হলো নারী ‘এ’ ক্যাটাগরি ফুটবল ১০,০০০ /-‘বি’ ৮০০০/- সি’ বিভাগ ৬০০০০ টাকা অথচ একজন শীর্ষ পুরুষ ফুটবলার পান ৫০-৬০ লাখ টাকা। শীর্ষ নারী ফুটবলার পান ৩-৪ লাখ টাকা। ক্রিকেটের চিত্রও আলাদা নয়। এটি ভয়ংকর বৈষম্য এমন টি মানা যায় না। নারী বা পুরুষ যে দলই হোক খেলোয়াড় সব সময়ই খেলোয়াড় নারী বা পুরুষ হতে পারে না।
কেউ কেউ বলছেন এই বৈষম্য পুরো ব্যাপারটা উল্টো করে দেওয়া যায় না?
এসব পলিসি মেকারদের মধ্যে মারাত্মক গণ্ডগোল আছে।” কেউ কেউ দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন “হায়রে বৈষম্য! কবে সেদিন আসবে, সমতার দৃষ্টিতে নারী-পুরুষকে দেখা হবে! সম্মান ও মর্যাদার চোখে নারীদের দেখবে।”
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বেতন কাঠামোর আওতায় কেবল নারী ফুটবলাররাই আছেন, অর্থাৎ নারী খেলোয়াড়রাই কেবল বাফুফে থেকে প্রতি মাসে বেতন পান। জাতীয় দলের পুরুষ খেলোয়াড়দের বাফুফে কোনো বেতন দিচ্ছে না। তবে ক্লাব ফুটবলে নারীদের তুলনায় অনেক গুণ বেশি পারিশ্রমিক পান পুরুষ খেলোয়াড়।
ঘর থেকে বেরিয়ে আমাদের মেয়েরা পুরস্কার জিতে নিয়ে ঘরে ফিরে আসে। সোনার বাংলার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন অসম বৈষম্যের অবসান চাই। নারীকে সব জায়গায় বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এ বৈষম্য দূর করা উচিত।
উভয়ের সম্মানী সমান করে দেওয়া হোক। আর ম্যানুয়্যালি তাদের দেয় অর্থের নাম বেতন থেকে সম্মানী করা হোক। বিজয়ী কন্যাদের জানাই ভালোবাসা অভিনন্দন।।
শ্রাবণী সুর: সভাপতি, যশোর রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলিন পরিষদ