মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরায় সদর উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ১১টি নমুনা পরীক্ষায় মাত্রাতিরিক্তহারে সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রাণঘাতি সীসার বিষক্রিয়া থেকে মুক্তি পেতে সেখানকার ক্ষেতে উত্পাদিত কৃষিপণ্য খাদ্য তালিকা থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বারাশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জন অবহিতকরণ সভায় এ নির্দেশনা দেয়া হয়।
মাগুরা জেলা প্রশাসক ড.আশরাফুল আলমের সভাপতিত্বে এ জন অবহিতকরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর।
আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে স্থানীয় গ্রামবাসিদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান প্রফেসর ড.কাজী রফিকুল ইসলাম ও খুলনা বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা.আমিনুল ইসলাম মোল্যা।
সভায় বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সিভিল সার্জন ডা. প্রদীপ কুমার সাহা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত কুমার প্রামানিক, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান, জেলা মত্স্য কর্মকর্তা এস এম আশিকুর রহমান প্রমুখ।
সভায় জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর থেকে জানানো হয়, মাগুরা সদরের বগিয়া ইউনিয়নের বারাশিয়া গ্রামের উত্তর পাড়ার মাঠের মধ্যে একটি ইট ভাটার পাশে অবৈধভাবে গড়ে ওঠে একটি ব্যাটারি কারখানা। যেখানে রাতের অন্ধকারে ব্যাটারি থেকে সীসা গলিয়ে তৈরি করা হয় মন্ড। এতে ওই এলাকার বায়ুমণ্ডলে বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে গত ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯টি গবাদি পশু মারা যাওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসির মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, একাত্তুর টেলিভিশন সহ বিভিন্ন গণ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে কারখানাটি সিলগালাও করে দেয়া হয়।
মাগুরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হাদিউজ্জামান জানান, বারাশিয়া গ্রামসহ পাশ্ববর্তি এলাকায় একের পর এক গবাদি পশু মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। আশে পাশের মাটি, ধান, গম, ঘাস সহ ১১টি বিভিন্ন ধরণের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এসব নমুনা পরীক্ষার পর ওই এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত হারে সীসার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায় যা জীবযন্তুর জন্যে প্রাণহানিকর।
তিনি বলেন, নমুনা পরীক্ষায় দেখা যায়, সুস্থ্য ধানগাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্যে সীসার মাত্রা ০.০০২ পিপিএম সহনীয় হলেও বারাশিয়া গ্রামের নমুনা পরীক্ষায় ৮.০৫ পিপিএম থেকে ১৬৬.৪১ পিপিএম পর্যন্ত পাওয়া যায়। একই ভাবে ধান গাছের খড়ে পাওয়া যায় ০.৭৮ পিপিএম থেকে ২৬.৪৬ পিপিএম পর্যন্ত। ঘাসে পাওয়া যায় ৩৬.৫২ পিপিএম থেকে ২০২২.৪৭ পিপিএম। ওই গ্রামের মাটি পরীক্ষায় ৩৬.৫২ পিপিএম থেকে ৫৬.৬৮ পিপিএম পর্যন্ত সীসার উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যায়। অথচ এসব ক্ষেত্রে সহনীয় মাত্রা মাত্র ০.০০২ পিপিএম।
এ অবস্থা বিবেচনায় বিগত সময়ে সেখানকার ২৯টি গরু মৃত্যুর কারণ সেখানকার পরিবেশে মাত্রাতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সেখানকার ক্ষেতসমূহে উত্পাদিত পণ্য খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বারাশিয়া স্কুল মাঠে আয়োজিত জন অবহিতকরণ সভায় উপস্থিতি প্রধান অতিথি মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। তিনি গ্রামের মধ্যে অবৈধ সীসার কারখানাটি গড়ে ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে, বিষয়টি সাধারণ জনগণের জন্যে অবহিতকরণ না হয়ে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের জন্যে হওয়া উচিত ছিল।
প্রধান অতিথি যে সব গৃহস্থের গবাদি পশুর মৃত্যু হয়েছে কেবল সেখানকার নমুনা পরীক্ষা নয়; প্রয়োজনে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা কিংবা সম্ভব হলে পাশ্ববর্তি আরো বিভিন্ন এলাকার নমুনা পরীক্ষার আহ্বান জানান।