মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান হুসাইন আলম বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের আলো ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।
পোল্যাণ্ডের রকলা ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি (ডক্টর অব ফিলোসফি) করে বর্তমানে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কর্মরত আছেন হুসাইন।
পরিবারে অভাব এবং সুযোগ না থাকায় প্রাথমিক জীবনে যার বিজ্ঞান পড়া হয়নি। স্থানীয় মাদিরাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাশ করতে হয়েছে। অর্থাভাবে জোটেনি বই। একই ক্লাসে দুই ভাইবোন ভাগাভাগি করে একসেট বই পড়েছে। অন্যের বাড়ির শিশুদের পড়িয়ে বেড়াতে হয়েছে লেখাপড়ার খরচ যোগাতে। আর আজ সেই হুসাইনের একাডেমিক কৃতিত্ব ইউরোপ এবং সারা বিশ্বে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাড়ে ৪০০ বছরের পুরাতন ওই ইউনিভার্সিটি থেকে নয় জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান বাংলাদেশের মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে হুসাইন।
হুসাইন পোল্যান্ডে ব্রিটিশ গ্র্যাজুয়েট কলেজ অব রোকলোরের একজন ফাউন্ডার।
সংগ্রামমুখর জীবনের অধিকারী হুসাইন আলম। বাস্তবে এতটা পথ পাড়ি দিতে তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। যার পেছনে ছিল তার তীব্র সাধনা, অদম্য ইচ্ছা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য। ফলে স্বপ্ন ও সংগ্রামের ফসল পেয়েছেন তিনি।
হুসাইন আলম অনার্স করেছেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অব সান্ডারল্যান্ড থেকে। মাস্টার্স করেছেন ক্যান্টারবেরি ক্রাইস্ট চার্চ ইউনিভার্সিটি থেকে। লন্ডনে তার লেখাপড়া ও জীবন যাপনের জন্য সব ধরনের কাজ করেছেন। ওই সময়ে তার এক বছরের খরচ ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার পাউন্ড। এতোগুলো টাকা আয় করতে কিচেন পটার, ক্লিনিংসহ তাকে তিনটি খণ্ডকালীন চাকরি করতে হয়েছে। সকালে ক্লিনিং, তারপর ইউনিভার্সিটি অব ক্যান্টের হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টের চাকরি এবং বিকালে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতে হতো তাকে। ফলে সব কাজ শেষ করতে রাত বারোটা বেজে যেত। পরে সারারাত জেগে লেখাপড়া করতেন তিনি।
হুসাইনের ইচ্ছা ছিল বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার; যেন গরীবের চিকিৎসক হতে পারেন। সেটি হয়নি। তিনি দ্বিতীয় বাংলাদেশি যিনি ক্যান্টারবেরি ক্রাইস্ট চার্চ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। তিনি একমাত্র বিদেশি পিএইচডির ছাত্র যিনি সাড়ে চৌদ্দশ ছাত্রের ভেতরে দুইবার বেস্ট স্টুডেন্ট কিঅ্যাক্টর স্কলারশিপ পেয়েছেন।
পোল্যান্ডের ইতিহাসে তিনি একমাত্র বিদেশি যিনি পলিশ এসোসিয়েশনের সাইন্টিফিক মেম্বার। তার ছয়টি আর্টিকেল বের হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল হাইক্লাস জারনালে। ২৫টিরও বেশি ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সে তিনি পেপার সাবমিট করেছেন।
হুসাইন আলমের মতে, কোনো স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে কঠিন পরিশ্রম ও সততার বিকল্প নেই। কঠোর পরিশ্রম, একান্ত মনোবল, তীব্র সাধনা ও সততার জীবন যাপনই কাউকে তার লক্ষ্যে পৌছে দিতে পারে।