সুলতানা কাকলি : এককাপ ‘চা’ কার না ভালো লাগে। সকালে বা সন্ধ্যেয় এক কাপে চায়ের মজা অফুরন্ত। আর গায়ক সুমন চাটুজ্যের গানে যখন ভেসে আসে ‘এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই’-তখন চা খাওয়াটা যেনো আরো রমণীয় ওঠে।
চায়ের বৈচিত্র্যময় স্বাদ নেওয়াটা এখন সময়ের দাবি। আর আর তাই এক কাপ ভালো চায়ের চাহিদা সর্বত্র। ক্রেতার রুচি মাফিক চা বানানো কত যে কঠিন, যিনি বানান তিনিই শুধু বুঝতে পারেন। আমরা শুধু দোকানে যাই, অর্ডার করি,খাই। ভাল না হলে দুটো টক কথা বলি, চায়ের মূল্য পরিশোধ করে নিজের রাস্তা মাপি।কখনও চা বিক্রেতার মনের কষ্ট কিংবা আনন্দের ভাগ গ্রহণ করিনা! কেউ করতেও চাই না। তবে চা বিক্রেতারা বরাবরই চা প্রেমিকদের মন জয় করতে চেষ্টা করেন।
মাগুরার হাসানের ‘চা’-এর কথা বলি। সুস্বাদু গরম চা’য়ের কারণে হাসান এখন সবার কাছে পরিচিত। মাগুরার কেন্দ্রবিন্দু পুর্বাশা সিনেমা হলের পুর্বপাশেই ছোট্ট পরিসরে এই চায়ের দোকানটি। হাসানের বাড়ি নদীর ওপারে পারনান্দুয়ালী গ্রামে। চা বিক্রি করেই সে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তার দোকানে গেলেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়েই বলে আপা, “ভাল আছেন?” শান্ত স্বভাবের ছেলেটা অতি ভদ্র ও বিনয়ী।
আমি যখন স্বামীর চাকরি সূত্রে বিভিন্ন জেলায় বসবাস করতাম, তখন অনেক সূত্র হতে হাসানের দোকানের চায়ের অতুলনীয় প্রশংসার কথা শুনতে পেতাম। আমার বান্ধবীরাও দল বেধে ওই দোকানে যেয়ে চা খেয়ে আসতো এবং আমাকেও আমন্ত্রণ জানাতো। তখন হতেই হাসানের দোকানের চা খাওয়ার ইচ্ছা মনে জেগেছিল। মাগুরা ফেরার পর আমার ছোটো বোন শিউলী শিকদার এর আমন্ত্রণে একদিন সেখানে সর্ব প্রথম চা খেতে যাই। তারপর থেকে সুযোগ পেলেই আমরা কজন, শিউলি, মুক্তি, রীতা, বীথি, লাভলি, অপরাজিতা, মাসুমা, কল্পনা ভাবী, সবাই মিলে হাসানের দোকানে দল বেধে চা খেতে যাবই যাবো।
হাসানের হাতের চায়ের স্বাদ আহ! সে অন্যরকম! তার দোকানে দু’রকম চা তৈরি হয়। দুধ চা এবং রঙ চা।তার দুধ চা বানানোর কৌশল অন্য সবার চেয়ে আলাদা।প্রথমে দুধ জাল দিয়ে ক্ষীরের মত ঘন করে। দুধ হতে যে সর তৈরি হয় সেটা আলাদা পাত্রে রাখে। কাস্টমারের ফরমাশ অনু্যায়ী জ্বালানো লিকারের সাথে দুধ ও চিনি পরিমান মতন দিয়ে আদা ও সরের মিশ্রণে দুধ চা তৈরি করে পরিবেশন করে। দুধ চায়ের মধ্যে আদা দিয়ে তার স্বাদকেই পাল্টে দেয়। রঙ চায়েরও জুড়ি মেলা ভার।
সকাল হতে রাত পর্যন্ত হাসানের দোকানে জমজমাট চা বিক্রি হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে কাষ্টমাররা এসে ভিড় করে হাসানের দোকানের চা পান করে। যুবা-বৃদ্ধ ভুলে যায় তাদের বয়সের ভেদাভেদ। ছোট্ট পরিসরে এক সাথে বসে চা খেয়ে মন ও জিহ্বার রসনাকে তৃপ্ত করে যার যার গন্তব্যের দিকে ধাবিত হয়। যাদের এখনও হাসানের দোকানের চা খাওয়ার সুযোগ হয়নি, তারা খেয়ে দেখতে পারেন।
পয়সা জলে পড়বে না নিশ্চয়ই! আর জমাট বাধা শীতে চা খেতেতো আরো মজা!
এবার বলি একটু চা’এর গল্প। জানা মতে, আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে চীন দেশে চা নামের প্রিয় পানীয় টির উৎপত্তি হয়। প্রচলিত রয়েছে যে, চীন দেশের এক সম্রাট যার নাম শেন নাং। তার নামের অর্থ হলো, স্বর্গীয়কৃষক, তিনিই স্বর্গ থেকে এই চা নামক প্রিয় পানীয় টি ছিনিয়ে এনেছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ সরকারের মাধ্যমে চা পানের প্রচলন শুরু হয়েছে। তৎকালীন সময়ে ইংরেজরা জনগণের মাঝে ব্যাপক ভাবে চা পানে অভ্যস্ত করানোর জন্য গ্রামে-গঞ্জে, হাটে, বাজারে বিনামূল্যে চা খাওয়ানো শুরু করে। কালক্রমে এই চা’ নামক পানীয়টি সকলের কাছেই সমাদৃত হয়েছে।