মাগুরা প্রতিদিন ডটকম: করোনা প্রাদূর্ভাবের কারণে মূল্যায়ন পরীক্ষার এসাইনমেন্টকে সামনে রেখে মাগুরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা রমরমা বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। বিগত সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ওই সময়ের টিফিন ফি, মাসিক বেতন, পরীক্ষা ফি থেকে শুরু করে যাবতিয় খাতের পাশাপাশি এসাইনমেন্ট পেপার বাবদ শিক্ষার্থিদের বড় অংকের অর্থ পরিশোধে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তথ্যানুন্ধ্যানে জানা গেছে, মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থির সংখ্যা ১ হাজার ২৬৫ জন। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ নভেম্বর এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থিদের তিনটি বিষয়ের এসাইনমেন্ট পেপার জমা নেওয়া হয়। এর আগেই যাবতিয় বকেয়া পরিশোধের জন্যে বিদ্যালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়টি ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থিদের কাছ থেকে টিফিন ফি, পরীক্ষার ফি, বিগত মাসের বেতনসহ বিভিন্ন খাতের অনুকুলে প্রায় ২৯ লক্ষ টাকা আদায় করেছে।
একই রকম অভিযোগ শহরের দুদ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয়, সদর উপজেলার রাওতড়া হৃদয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শত্রুজিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহম্মদপুর উপজেলার ডুমুরশিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ জেলার সকল উপজেলার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও। তবে আরো এক ধাপ এগিয়ে সদর উপজেলার তিতারখাঁ পাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। তারা এসাইনমেন্ট নিয়ে নতুন বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। বিদ্যালয়ের সাড়ে ৪শত শিক্ষার্থির কাছ থেকে তারা কেবল এই খাত থেকেই আদায় করছেন ২শ টাকা করে।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থি ও অভিভাবকরা জানান, এসাইনমেন্ট পেপার জমা দেওয়ার জন্যে তারা কম্পিউটারে তৈরি একটি কভারপেজের ফটোকপির সঙ্গে ডিমাই সাইজের ৪টি পাতা সরবরাহ করেছেন। সেগুলো জমা দেয়ার সময় প্রত্যেকেকে ২শত করে টাকা পরিশোধ করতে হবে।
বদর উদ্দিন মন্ডল নামে একজন অভিভাবক জানান, আমার দুটি ছেলে লেখাপড়া করে। অটোরিক্সা চালিয়ে তাদের খরচ যোগাড় করতে হয়। এখন শিক্ষকরা টাকা চাইলে না দেওয়ার কোনো উপায় নেই।
একই বিদ্যালয়ের অভিভাবক জবেদা বেগম জানান, আমার দুটি মেয়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে পড়ে। কৃষক পরিবারে আমাদের বসবাস। নগদ টাকা যোগাড় করতে কষ্ট হয়। কিন্তু টাকা না দিলে সন্তানদের ক্ষতি হতে পারে সেই ভয়ে দিতে হচ্ছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বললে তারা টাকা নেওয়ার কথা ¯^ীকার করেছেন। তবে পরীক্ষার ফি কিংবা বেতন নেওয়া যাবে না শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এমন কোনো পরিপত্র না পাওয়ার কথা জানান তারা।
মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াউল হাসান বলেন, বন্ধ থাকলেও বিদ্যালয়ের অনেক খরচ। সেগুলো শিক্ষার্থিদের কাছ থেকে না নিলে চলা সম্ভব নয়। তবে টিফিন ফি’র টাকা ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে মাগুরা জেলা শিক্ষা অফিসার রণজিত কুমার মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থিদের কাছ থেকে কোনো প্রকার অর্থ আদায় না করার জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্দেশনা মানেনি। বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।