আজ, মঙ্গলবার | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ২:৪৫

ব্রেকিং নিউজ :
মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান মাগুরা সদরে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ৭ শ্রীপুরে ৪ প্রার্থীর মনোনয়ন জমা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিক কাজী ফয়জুর রহমানের ইন্তেকাল মাগুরার শ্রীপুরে স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা! শায়লা রহমান সেতুর নির্মম মৃত্যুর বিচারের দাবিতে জাসদের মানববন্ধন সমাবেশে মাগুরায় ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগে মামলা-মানববন্ধন ইদ কার্ড ফেরাতে মাগুরায় “পরিবর্তন আমরাই”

ভালোবাসার মানুষগুলো বেঁচে থাকুক আমাদের প্রার্থনায়

জাহিদ রহমান : আমাদের ভালোবাসার আকাশ থেকে অকস্মাৎ ঝরে গেল আরও এক সুপ্রিয়জন-শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা শাহাদত। আকবর বাহিনী তথা শ্রীপুর বাহিনীর বীর যোদ্ধা। যাঁকে আমি ভাই বলে সম্মোধন করতাম-‘শাহাদত ভাই’। ছোট ভাই হিসেবে যিনি আমাকে অপার স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তাঁর স্নিগ্ধ নির্মল অতুলনীয় ভালোবাসা ভুলবার নয়।

শাহাদত ভাই-এর বাড়ি শ্রীপুরের হরিন্দী গ্রামে।
দীর্ঘসময় শ্রীপুরের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বরাবরই তাঁর দীপ্ত পদচারণা ছিল। শেষ জীবনে তিনি আরও সক্রিয় ছিলেন।
একসময় আনসার বাহিনীতে কাজ করেছেন। শ্রীপুর প্রেসক্লাবের উপদেষ্টা ছিলেন মৃত্যুঅব্দি।  শ্রীপুরের সব ধরনের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সামনের কাতারেই থাকতেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে শ্রীপুরে ছয়দফা, অসহযোগ আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে দিয়ে বিকশিত হওয়া তরুণদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন।

সু-প্রিয়জন ‘শাহাদত ভাই’ কাল চিরবিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তাঁর চলে যাওয়ার সংবাদটা প্রথম শুনি তোহা মুরাদ ভাই-এর কাছ থেকে। পরে সাংবাদিক মুসাফির নজরুল দারিয়াপুর হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বিষয়টি আরও নিশ্চিত করেন। ‘শাহাদত ভাই’ বেশ কিছুদিন অসুস্থ ছিলেন। ২৬ জুন সকালে আমাকে ফোন করে বলেছিলেন তাঁর শরীর ভালো না। বাড়িতেই আছেন, ওষুধ খাচ্ছেন। কিন্তু আমি নিজেও বুঝিনি উনি কতোটা অসুস্থ।

শ্রীপুরে গত দেড় দশকে যাদের অপার স্নেহ ভালোবাসায় আমি সিক্ত তাদের মধ্যে শাহাদত ভাই অন্যতম। এই শতকের সূচনাতে আমাদের এই ভালোবাসার অনন্য ভুবন তৈরি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সিপাহসালার অধিনায়ক আকবর হোসেনকে ঘিরে। সেই ভুবনে বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবু হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা শাহাদত, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল দে শিকদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী শহীদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম রাজু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার আলী এবং তোহা মুরাদ ভাই ছিলেন অন্যতম। মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবু হোসেন, অধিনায়ক আকবর হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্যামল দে শিকদার-এক এক করে চলে গেছেন।
সর্বশেষ চলে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মিঞা শাহাদত।

শাহাদত ভাই সাথে আমার সম্পর্কটা বরাবরই বড় বেশি গভীর ও প্রাণবন্ত ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণার কাজে তাঁর নিরন্তর সহযোগিতা পেয়েছি সবসময়। যখন যে সহযোগিতা চেয়েছি, তিনি তা হাসিমুখে করেছেন।
ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলে শাহাদত ভাই একবারের জন্যেও হলে আমার বাড়িতে দেখা করতে আসতেন। হাসিমুখে দুদণ্ড তাঁর সাথে গল্প না করলে ভালো লাগতো না।
অনেকবারই ঢাকা থেকে বাড়িতে গিয়ে রাতে তাঁকে ফোন করে বলতাম,
‘ভাই সকালে শ্রীপুরে অধিকারী হোটেলে আসেন। একসাথে বসে নাস্তা খাব, চা খাব।’
চা খেতে খেতে তাঁর সাথে কথা আর গল্পের যেনো শেষ হতো না। কত কথা! ঢাকা থেকে প্রায়ই ফোনে কথা হতো।
অমিত বাংলায় তিনি কথা বলতেন। শুদ্ধস্বরে অপর প্রান্ত থেকে খানিকটা অভিমান কণ্ঠে বলতেন,
‘তুমি কী আমাকে ভুলে গেলে? ফোন-টোন করো না।’
আমি হেসে উত্তর দিতাম,
‘শাহাদত ভাই ভুলিনি, কেমন আছেন?’
এরপর কথা চলতো। কতো কথা। সংসার জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির নানান কথা। বড্ড কথা বলতে ভালোবাসতেন।
শেষ কথা বলতেন, ‘বাড়ি এলে দেখা করো। ভাইকে ভুলে যেও না।’

প্রিয় অধিনায়ক আকবর হোসেন বেঁচে থাকতে আমরা শ্রীপুরে অনেক ছোট খাটো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতাম। ইফতার পার্টি, অধিনায়কের জন্মদিন পালন-এরকম আরও অনুষ্ঠান। শাহাদত ভাই প্রতিটি অনুষ্ঠান আয়োজন সফল করতে সহযোগিতা করতেন। অনেক রাত অব্দি শ্রীপুরে অধিনায়কের সাথে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়ার সেই সোনালী স্মৃতি জীবনে এক অমূল্য সম্পদ হয়েই আছে।

বেশ আগেই আমরা হারিয়ে ফেলি প্রিয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা খোন্দকার আবু হোসেনকে। রণাঙ্গনের এই সাহসী মানুষ হঠাৎ করেই বিদায় নেন। এরপর ২০১৫ সালে ২ মে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নেন মুক্তিযুদ্ধের ধ্রুুবতারা প্রিয় অধিনায়ক আকবর হোসেন। সেদিন সকালে ফোনে করুণকণ্ঠে এই দুঃসংবাদ আমাকে প্রথম জানিয়েছিলেন শাহাদত ভাই। আর কিছুদিন আগে শ্যামল দা তিনিও বিদায় নেন। সর্বশেষ শাহাদত ভাই চলে গেলেন।

আমাদের আকাশ থেকে এক এক করে ঝরে যাচ্ছে সব তারা। যাঁরা চলে গেলেন তাঁরা সবাই-ই মুক্তিযুদ্ধের এক একটি দীপশিখা। স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে যাঁদের অবদান অসামান্য। আমাদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক লড়াই-এর যাঁরা অনুপ্রেরণা, নির্দেশক। আজ সকালেই হরিন্দীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত ভাই-এর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সত্যি আর কোনোদিন তিনি ফোন করবেন না। শ্রীপুরে চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাবেন না।

প্রিয় মানুষগুলোর একের পর এক চলে যাওয়া বড় কষ্টের। তবু বহমান জীবনে সব মেনে নিতেই হয়। যেমনটি বলেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘জীবনরে কে রাখিতে পারে, আকাশের প্রতি তারা ডাকিছে তাহারে’। ভালোবাসার মানুষগুলো বেঁচে থাকুক আমাদের নিয়ত প্রার্থনায়।
জাহিদ রহমান: সম্পাদক, মাগুরা প্রতিদিন ডটকম

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology