আজ, মঙ্গলবার | ১৮ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | দুপুর ১২:৩৪


ঢাকায় গুলিতে নিহত মাগুরার তিন পরিবারে চলছে আহাজারি

মাগুরা প্রতিদিন : কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় মারা গিয়েছেন মাগুরার ৩ জন। নিহতরা হচ্ছেন মাগুরা সদর উপজেলার আজমপুর গ্রামের কালাম মোল্যার ছেলে রাজু আহমেদ (২৪), শ্রীপুর উপজেলার বরইচারা গ্রামের আক্কাস মোল্যার ছেলে মুসতাকিন বিল্লাহ (২৮) এবং একই উপজেলার নহাটা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আসিফ ইকবাল রাব্বি (৩৪)।

নিজের ভবিষ্যত গড়তে যারা বাড়ি ছেড়েছিলেন তাদের নির্মম মৃত্যুতে ওই তিন পরিবার এবং স্বজনদের মধ্যে চলছে আহাজারি।

মাগুরা সদর উপজেলার আজমপুর গ্রামের কালাম মোল্যার ছেলে রাজু আহমেদ (২৪) মাগুরা আদর্শ কলেজে ডিগ্রি শ্রেণীতে ভর্তি হলেও পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে লেখাপড়া বাদ দিয়েছে ৩ বছর আগে। বাবা কালাম মোল্যা একজন দিনমজুর। অন্যের জমিতে শ্রম দিয়েই সংসারিক ব্যয় নির্বাহ করেন। রাজুর বড়ভাই মালয়েশিয়া চাকরি করতেন। তিন মাস আগে শারীরিক অসুস্থ্যতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বিধায় নিরুপায় হয়েই বাড়ি ছাড়তে হয়েছে রাজুকে। গত তিন মাস ধরে সে ঢাকায় জননী কুরিয়ার সার্ভিসে বুকিং অফিসার হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে প্রায় প্রতিদিনই রাজু কাজের ফাকে অংশ নিতেন বলে তার ঘনিষ্টজনেরা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজু আরো কয়েকজন বন্ধু মিলে কালো পাঞ্জাবি পরে মহম্মদপুর এলাকায় ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেয়। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।

মাগুরায় রাজুর পরিবার এবং এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে মাগুরা আদর্শ কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হলেও লেখাপড়া এগোয়নি। সে মাগুরার জগদল ইউনিয়ন ছাত্রদলের কার্যকরি কমিটির ১নং সদস্য হলেও বিগত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে এলাকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের সাথে নির্বাচনী কর্মকাÐে অংশ নেয়।
রাজুর বড়ভাই অসুস্থ্যতা নিয়ে দেশে ফিরে আসার পর রাজু চাকরি নিয়ে ঢাকায় গেলে বাবা-মা খুবই খুশি হয়েছিলেন। নিয়মিত বাড়িতে টাকা পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ রাজুর মৃত্যুতে একেবারেই ভেঙ্গে পড়েছে তার পরিবার।

বুধবার দুপুরে আজমপুর গ্রামের রাজুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার মা নাসিমা খাতুন নিহত সন্তানের পোশাক, পড়ার বই ব্যাগ, কাঁথা-বালিশ হাতে নিয়ে বিলাপ করছেন।

মা নাসিমা বেগম বলেন, আগের রাতেও রাজুর সাথে কথা হয়েছে। মোবাইলে সবার খবর নিয়েছে। ছেলে মিছিল মিটিংয়ে যাচ্ছে জানতে পারলে কখনোই যেতে দিতাম না। কিন্তু নিয়তি এমন ছিল বলেই ঘূর্ণক্ষরেও জানতে পারিনি।
ঢাকায় নিহত মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নহাটা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে আসিফ ইকবাল রাব্বি (৩৪) ঢাকায় একটি বায়িং হাউজে কর্মরত ছিলেন। অন্যদিকে একই উপজেলার বরইচারা গ্রামের আক্কাস মোল্যার ছেলে মুসতাকিন বিল্লাহ (২৮) মিরপুরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন।

আসিফ ইকবাল রাব্বি এবং মুসতাকিন বিল্লাহ দু’জনই ১৯ জুলাই শুক্রবার ঢাকার মীরপুর-১০ এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন।

ঘটনার পরদিন ২০ জুলাই শনিবার নিহত মাগুরার এই তিন যুবককে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology