মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজারে স্বাস্থ্য প্রশাসনের বন্ধ করে দেয়া একটি প্রাইভেট হাসপাতালে অজ্ঞান ডাক্তার ছাড়া গোপনে অপারেশন করতে গিয়ে নির্জলা খাতুন (১৩) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সে ওই উপজেলার পুখরিয়া গ্রামের কৃষক নাজমুল ইসলামের কন্যা।
শালিখা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার সাইমুন নেছা জানান, আড়পাড়া বাজারের আল হেরা প্রাইভেট হাসপাতালটির সরকারি কোনো নিবন্ধন নেই। তাছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার মতো উপযুক্ত নয় সেটি। বিধায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে গত ২৯ মে হাসপাতালটি বন্ধ করে দেয়ার জন্যে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু তারপরও তারা গোপনে সেখানে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। শনিবার ওই হাসপাতালে নির্জলা খাতুন নামে ওই কিশোরীর শরীরে অস্ত্রপচার করা হলে কিছুক্ষণ পর তার মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর বিষয়টি জানতে পেরে সেখানে অভিযান চালানো হয়। এ সময় অবৈধ হাসপাতালটিকে তালা মেরে দেয়ার পাশাপাশি সেটির মালিক বাচ্চু মিয়ার স্ত্রী মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স করিমন নেছাকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আলহেরা প্রাইভেট হাসপাতালের মালিক বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার হাসপাতালে মেয়েটির শরীরে এপেন্ডিক্স অপারেশন করেন যশোরের ডাক্তার সনিয়া শারমিন। অপারেশনও ভালো হয়েছে। তবে মেয়েটির দূর্ভাগ্য বলে হার্টব্লক হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে তার হাসপাতালটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবৈধ ঘোষণার কোনো চিঠি তাকে দেয়া হয়নি।
রোগী মৃত্যুর বিষয়ে ডাক্তার সনিয়ার শারমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অপারেশনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাজী মাসুদ নামে একজনকে অজ্ঞান ডাক্তার হিসেবে নিয়োগ দেয়। আমার অপারেশন করতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় লেগেছে। কিন্তু অপারেশনের পর রোগীর জ্ঞান ফেরা না ফেরার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি দেখবেন অজ্ঞান ডাক্তার। তবে হাজী মাসুদ অজ্ঞান ডাক্তার কিনা সেটি আমার জানার কথা নয়। তার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাও নেই।
মাগুরার স্বাস্থ্য বিভাগ সংশ্লিষ্ট একাধিক লোকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আল হেরা হাসপাতালে হাজী মাসুদ অজ্ঞান ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি আদৌ কোনো ডাক্তার নন। তিনি মাগুরা নার্সিং ইনস্টিটিউটের টিউটর হাজেরা খাতুনের স্বামী। মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ের মা প্রাইভেট হাসপাতালের একজন অংশীদার হাজী মাসুদ। সম্প্রতি অনিবন্ধিত এ প্রাইভেট হাসপাতালটিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
রোগী মৃত্যুর বিষয়ে হাজী মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ডাক্তার শারমিন অযথা আমার নাম উচ্চারণ করেছেন। আমি ডাক্তারও নই, সেখানে ওই মেয়েটিকে অজ্ঞানের কোনো দায়িত্বও নিইনি।
মাগুরা সিভিল সার্জন ডাক্তার শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ক্লিনিকটি অবৈধ হওয়ায় সেটি বন্ধের জন্যে তাদের চিঠি দেয়া হলেও তারা গোপনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তবে সেখানে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স কর্মকালিন সময়ে কীভাবে আল হেরা প্রাইভেট হাসপাতালে কাজ করছিলেন এবং অবৈধ ঘোষিত হাসপাতালে একজন ডাক্তার কীভাবে অস্ত্রপচার করেন সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।